পার্ক কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী জানায়, গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক তৈরির অনেক আগে থেকেই ওই এলাকায় ছিল প্রচুর সংখ্যক শালবন। অসাধু ব্যক্তিদের কাছ থেকে এ শালবন ও সরকারি জমি রক্ষা করতেই সাফারি পার্কের উদ্যোগ নেয় সরকার।
সাফারি পার্কের ভেতর বিভিন্ন বেষ্টনীতে রাখা হয়েছে বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, বানর, হরিণ, জেব্রা, জিরাফ, কুমির, গণ্ডার, হাতি, সাপ, পাখি ও ময়ূরসহ বিভিন্ন পশু-পাখি। এদের মধ্যে পাখি ছাড়া প্রায় সব পশু পার্কের বিশাল বিশাল বেষ্টনীতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে খাদ্যের অভাবে প্রাকৃতিকভাবে পার্কে তেমন বন্যপ্রাণীর অভায়শ্রম হয়ে ওঠেনি। প্রাকৃতিকভাবে যাতে এই পার্কের ভেতর বিভিন্ন পশু-পাখির অভায়শ্রম হয় সেজন্য ৫৪ প্রজাতির ২০ হাজার ফুল-ফলসহ বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।
এছাড়া পার্কের ভারসাম্য রক্ষা ও সৌন্দর্য বাড়াতে এসব গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির কিছু গাছের চারা যেমন- ডেউয়া, চাপালিশ, ছাতিয়ান, বাক্সবাদাম, হিজল, সোনালু, নারিকেল, হলদু ও রক্তন গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। উল্লুকের অভায়শ্রমের জন্য লাগানো হয়েছে- চাপালিশ, ডেউয়া ও ছাতিয়ান গাছের চারাও। এদের মধ্যে চাপালিশ, ডেউয়া ও ছাতিয়ান গাছ প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। পশু-পাখির খাদ্যের জন্য লাগানো হয়েছে- বড়ই, আমলকি, জলপাই, কামরাঙা, পেয়ারা, আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম ও আমড়াসহ বিভিন্ন ফলের গাছ। এদিকে সাফারি পার্কে আকাশমনিসহ পরিবেশবান্ধব নয় এমন সব গাছ অপসারণ করে সেখানে লাগানো হয়েয়েছে ফুল-ফলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা।
পার্ক কতৃপক্ষ জানান, শুধু গাছের চারা রোপণ নয়, পার্কের সৌন্দর্যও বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে পার্কের পশু-পাখির পরিচর্যা ও চিকিৎসার মান উন্নত করা হবে।
পার্ক এলাকার বাসিন্দা হজরত আলী জানান, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সৌন্দর্য আগের চেয়ে বেড়েছে। পার্ক কর্মকর্তা তবিবুর রহমান দায়িত্ব পালন করার পর দিন দিন এ পার্কের সৌন্দর্য বাড়ছে। তিনি শ্রমিকের মতো কাজ করছেন। পার্কের ভারসাম্য রক্ষায় নিজেই শ্রমিকদের সঙ্গে গাছের চারা লাগানোসহ নানান কাজ করছেন। তাকে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে তিনি পার্কের একজন কর্মকর্তা। অন্য কর্মকর্তার পাশাপাশি পশুপাখি ও গাছপালা পরিচর্যাসহ পার্কের সার্বিক দিক তিনি দেখাশোনা করেন।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ পার্কে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য পশু-পাখি রয়েছে। এদের খাবার দিতে হয়। প্রাকৃতিকভাবে এসব পশু-পাখি কোনো খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। পার্কে বিশাল শালবন থাকলেও এখানে পোকামাকড় ছাড়া পাখির তেমন কোনো খাবার নেই। প্রকৃতিকভাবে যাতে এ পার্কে পশু-পাখিসহ বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হয় সেজন্য ফলসহ বিভিন্ন ধরনের ২০ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এসব গাছে ফল ধরলে এমনিতেই বন্যপ্রাণীরা এখানে অভয়াশ্রম গড়ে তুলবে। এছাড়া এসব গাছের ফল দিয়ে পার্কের পশু-পাখির খাবার জোগান দেওয়া যাবে। এতে অর্থ ও শ্রম দুই বাঁচবে। এতে বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯
আরএস/এএ