ঢাকা, সোমবার, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

না বুঝে সংসদে ‘না-ভোট’ দিলেন সরকারি দলের সদস্যরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯
না বুঝে সংসদে ‘না-ভোট’ দিলেন সরকারি দলের সদস্যরা সংসদ অধিবেশন (ফাইল ফটো)

জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: না বুঝে সংসদে ‘না-ভোট দিলেন সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা। পরে দ্বিতীয় দফায় ভোটে দিলে তারা আবার হ্যাঁ ভোট দেন।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী একটি বেসরকারি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব উপস্থান করলে তার উপর ভোট চাওয়া হলে এ ঘটনা ঘটে।

তামাকজাত দ্রব্যের ওপর প্রচলিত অ্যাড–ভেলারাম (স্তরভিত্তিক মূল্যের শতকরা হার) পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট করারোপ করার দাবি জানিয়ে এ বেসরকারি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব এনেছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী।

সিদ্ধান্ত প্রস্তাব প্রত্যাহারের জন্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ভোটে দিলে সরকারি দলের সদস্যরা ‘হ্যা’ ভোট দেওয়ার পরিবর্তে ‘না’ ভোট দেন। পরে স্পিকার দ্বিতীয় দফায় প্রস্তাবটি ভোটে দেন। তখন বেশিরভাগ সদস্য ‘হ্যাঁ’ ভোট দেন। এর মধ্য দিয়ে উত্থাপিত একটি বেসরকারি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব নাকচ হয়।

সাবের হোসেন চৌধুরী তার প্রস্তাবের পক্ষে বলেন, বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ অকাল মৃত্যুবরণ করে। প্রায় ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। প্রায় ৬১ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। ২০১৭–২০১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। যা একই সময়ে তামাকখাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের চেয়ে বেশি।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে তামাকের যে কর–কাঠামো তা অত্যন্ত জটিল, পুরোনো ও অকার্যকর। বিশ্বের মাত্র ছয়টি দেশে এভাবে করারোপ করা হয়। অন্যদিকে ফিলিপাইন, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশিরভাগ দেশে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি চালু আছে। এটি করা হলে রাজস্ব আয় বাড়বে।

জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বর্তমান আইনে তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের সুযোগ নেই। চলমান বাজেটে স্তরভিত্তিক শুল্কারোপ করা হয়েছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এবং গ্রাহকের ক্রয় ক্ষমতা বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ক্রমান্বয়ে সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতি চালু করার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো একদিন এটি হবে।

মন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণত প্রস্তাবকারী সদস্যরা তাদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু মন্ত্রীর বক্তব্যে ‘সন্তুষ্ট’ না হয়ে সাবের হোসেন চৌধুরী তার প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে রাজি হননি। তখন নিয়মানুযায়ী তার প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের জন্য কণ্ঠভোটে দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সাবের হোসেন চৌধুরীর প্রস্তাবে বলা হয়, ‘সংসদের অভিমত এই যে, সব প্রকার তামাকজাত দ্রব্যের ওপর প্রচলিত অ্যাড-ভ্যালোরেম (মূল্যানুপাতে) পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট করারোপ করা হউক’।

স্পিকার ভোটে বলেন, সাবের হোসেন চৌধুরীর এ প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করা হোক, যারা এর পক্ষে আছেন তারা হ্যাঁ বলুন। খুব কম সংখ্যক সদস্য হ্যাঁ বলেন। স্পিকার বলেন, যারা এর বিপক্ষে আছেন তারা ‘না’ বলুন। তখন বেশিরভাগ সদস্য ‘না’ বলেন। অর্থাৎ বেশিরভাগ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়ে দেন। এ হিসেবে প্রস্তাবটি প্রত্যাহার হয়নি। সবাই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ায় সরকার দলের পক্ষ থেকে ‘ভুল ভোট’ দেওয়ার কারণে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে হাসতে দেখা যায়।

পরে তিনি সব সদস্যের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। তিনি প্রস্তাবটি আবার পড়ে শোনান এবং দ্বিতীয় দফা ভোট দেন। দ্বিতীয় দফায় ‘হ্যাঁ’ ভোট জয়ী হয়। এতে সাবের হোসেন চৌধুরীর প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যাত হয়।

পরে সাবের হোসেন চৌধুরী এ বিষয়ে স্পিকারের কাছে ক্লারিফিকেশন চান। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য সরকারের রাজস্ব বাড়ানো। তামাক কোম্পানিকে মুনাফা করার সুযোগ করে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য নয়। একটা ভোটে সরকারের পতন হয়ে যেতো না। এটা সরকারের বিপক্ষের ভোট না।

এরপর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ফ্লোর নিয়ে দাড়িয়ে সাবের হোসেন চৌধুরীকে সমর্থন করেন। মেনন স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার একজন কর্মকর্তা আপনাকে যেনো কি বললেন আর আপনি পুনরায় ভোটে গেলেন। এটি একটি খারাপ দৃষ্টান্ত, আপনি এটি স্থগিত করেন।

এরপর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রথমে আমি একটু কনফিউজড (দ্বিধাবিভক্ত) ছিলাম। যার ফলে পুনরায় উপস্থাপন করেছি এবং ভিন্ন ফল এসেছে। যদি সংসদ সদস্যরা আপনার (সাবের হোসেন চৌধুরী) পক্ষে ভোট দিতো তাহলে দ্বিতীয়বারও একই ফল হতো। প্রথম ভোটিংয়ের সময় আমার মনে হয়েছে এলোমোলো ছিলো। এখানে আমার পক্ষপাতিত্বের কোনো কারণ নেই। আশা করি, বিষয়টি নিয়ে আর কোনো কনফিউশন থাকবে না।

** ড্রোন আমদানি নীতিমালা করছে সরকার

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯
এসকে/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।