ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাতি অকেজো, হাতের ইশারায় চলছে ট্রাফিক ব্যবস্থা

তামিম মজিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯
বাতি অকেজো, হাতের ইশারায় চলছে ট্রাফিক ব্যবস্থা রাজধানীর ব্যস্ত সড়কের সিগন্যাল পয়েন্টের অকেজো বাতি। ছবি: জিএম মুজিবুর।

ঢাকা: বিশ্বের অন্যতম জনবহুল নগরী রাজধানী ঢাকা। অথচ এ শহরের রাস্তায় এখনও অ্যানালগ পদ্ধতিতে অর্থাৎ পুলিশের হাতের ইশারায় নিয়ন্ত্রণ করা হয় ট্রাফিক ব্যবস্থা।

রাজধানী শহরে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা চালু না থাকায় অসহনীয় যানজটসহ সড়কে বিরাজ করছে চরম বিশৃঙ্খলা।

তথ্য বলছে, প্রায় দেড় যুগ আগে ঢাকা শহরের সড়কে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা চালু করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

সেই প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের ৭০টি মোড়ে আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হয়েছে। তবে সেগুলো অকার্যকর রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণের ফলে সুফল মিলছে না। ঢাকার যানজট নিরসন ও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক কন্ট্রোল প্রকল্প গ্রহণের ওপরই জোর দেন তারা।

ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, মানুষের মধ্যে সিগন্যাল দেখে চলা বা আইন মানার প্রবণতা নেই। তাই বাধ্য হয়েই হাতের ইশারায় সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে।

তবে আশা প্রকাশ করে তারা বলেন, খুব শিগগিরই এ ব্যবস্থার পুরোপুরি দায়িত্ব পাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ফলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ঢাকা শহরে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক পদ্ধতি চালু করা সম্ভব হবে।

বিশ্বের উন্নত দেশ তো বটেই, অনেক উন্নয়নশীল দেশও বড় শহরগুলোতে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা অনেক আগেই চালু করেছে। ফলে সেইসব দেশের সড়কে নেই যানজট ও বিশৃঙ্খলা।

সরেজমিনে রাজধানীর বিজয় সরণির ট্রাফিক সিগন্যাল মোড় ঘুরে দেখা যায়, একটি লোহার স্ট্যান্ডে মোট আটটি বাতি থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র দুইটি। ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত তিনটি বাতি। আর বাকিগুলোর স্থান ফাঁকা। একই চিত্র নগরীর ব্যস্ততম সড়ক কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, মালিবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইল, গুলিস্তানসহ অধিকাংশ সড়কের ট্রাফিক সিগন্যাল পয়েন্টের।

শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা। রাজধানীর কারওয়ান বাজরের সিগন্যাল পয়েন্টের সংকেত বাতিতে লাল আলো জ্বলে থাকলেও এগিয়ে চলেছে গাড়ির সারি। গাড়ির চালক বা ট্রাফিক পুলিশ কেউই খেয়াল রাখছেন না সিগন্যাল বাতির দিকে। লাল-হলুদ-সবুজ যে বাতিই জ্বলুক না কেনো, গাড়ি চালকরা অপেক্ষায় থাকছেন ট্রাফিক সদস্যদের হাত উঁচিয়ে সংকেত দেওয়ার দিকে। ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারাতেই চলছে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ। তথ্য বলছে, রাজধানী ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী প্রায় ১২ লাখ গাড়ি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে হাতের ইশারাতেই। ঢাকার যানজট নিরসনে সরকার প্রকল্প গ্রহণ করলেও সমন্বয়হীনতার অভাবে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের তথ্য বলছে, ঢাকার যানজট নিরসনে ২০০১-০২ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এতে ব্যয় হয় ২৫ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর ৫৯টি সড়কের ৭০টি মোড়ে আধুনিক ‘ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি’ বসানো হয়।

এর মধ্যে ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগে ৩৪, পূর্ব বিভাগে ১২, উত্তরে ১১ ও পশ্চিমে ১৩টি ট্রাফিক সিগন্যাল রয়েছে। ২০০৯ সালের ২২ নভেম্বর এসব বাতি চালু করা হলেও অল্প দিন যেতেই তা শিথিল হয়ে যায়। পরে একে একে বিকল হয়ে পড়ে বাতিগুলো।

ট্রাফিক কনস্টেবল ছানওয়ার আলী বাংলানিউজকে বলেন, সিগন্যাল বাতি অনেকটা অচল, এগুলোর ব্যবহার নেই। তাই ট্রাফিক পুলিশের ম্যানুয়াল অপারেটিং তথা হাত উঁচিয়েই চলছে গাড়ি নিয়ন্ত্রণের কাজ।

প্রচেষ্টা পরিবহনের চালক রাজিব মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারায় গাড়ি চালাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে বাতি থাকলে দূর থেকে দেখতে পারতাম। এখন সেটা দেখতে পারি না।

গণপরিবহনে নিয়মিত যাতায়াতকারী সুহেল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক কন্ট্রোল পদ্ধতি চালু হলে সড়কে যানজট ও বিশৃঙ্খলা থাকবে না। কিন্তু বাংলাদেশে এ অবস্থা কবে চালু হবে? এই আধুনিক যুগেও ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারায় চলতে হয়। ফলে যানজট লেগেই থাকে।

এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে সিটি করপোরেশন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা করে থাকে। আমরা শুধু মাঠ পর্যায়ে সেটা নিয়ন্ত্রণ করে থাকি।

তিনি বলেন, কিছু প্রক্রিয়া বাকি আছে। সেটা সম্পন্ন হলে চলতি বছরের মধ্যেই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীনে চলে আসবে। সেটা আসার পরে আমরা টেকনিক্যাল লোক নিয়োগ করবো। পরবর্তীতে আমরা স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা চালু করার জন্য টেন্ডার আহ্বান করবো।

আগামী দু’এক বছরের মধ্যে পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক পদ্ধতি চালু করা সম্ভব হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯
টিএম/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।