সেই অটোরিকশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরেক যন্ত্র দানব ইজিবাইক। যানবাহন ক্যাটাগরিতে পড়ে না ইলেকট্রিক চার্জে চলা ইজিবাইক নগর-শহরে চলছে হাজারে হাজার।
পরিসংখ্যান মতে, সিলেটে রেজিস্ট্রেশনকৃত অটোরিকশার চেয়ে নম্বরবিহীন সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করছে বেশি।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটি) সিলেটের তথ্য মতে, ২০১৪ সালে সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দেওয়া বন্ধ হয়। ওই সময় পর্যন্ত সিলেট জেলায় রেজিস্ট্রেশনকৃত সিএনজি অটোরিকশা সংখ্যা ১৯ হাজার ২৩২টি। তবে রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইকের কোনো পরিসংখ্যান এই দপ্তরে নেই।
সিএনজি অটোরিকশার শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, শুধু সিলেট জেলায় রেজিস্ট্রেশনবিহীন অন্তত ২৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে। এর বাইরে ইজিবাইক চলাচল করছে কয়েক হাজার। এসব ইজিবাইকগুলোকে প-সিরিয়ালে নম্বর দিচ্ছে বিআরটিএ মৌলভীবাজার শাখা।
বিআরটিএ সিলেটের সহকারী পরিচালক সানাউল হক বাংলানিউজকে বলেন, রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশার বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইনে মামলা দেওয়া যায় না। আর ইজিবাইক কোনো যানবাহনের ক্যাটাগরিতে পড়ে না। যে কারণে ডাম্পিং করা ছাড়া কোনো পন্থা নেই। তবে, সিলেটে ডাম্পিং এরিয়া না থাকায় অভিযান চালিয়েও কোনো সফলতা আসছে না। আর মহাসড়কে অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি নেই। কিন্তু তারপরও চলাচল করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটে গ্রাম-শহরে অটোরিকশার শতাধিক শ্রমিক ইউনিয়ন রয়েছে। এসব ইউনিয়ন বা সমিতিতে রেজিস্ট্রেশনকৃত অটোরিকশায় ভর্তি ফি দিতে হয় ২ হাজার টাকা। রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশা ক্ষেত্রে নেওয়া হয় ৫ হাজার টাকা। রোডপার্মিট হিসেবে গাড়ি প্রতি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশে ভর্তি ১ হাজার ও মাসোহারা দিতে হয় ১শ টাকা এবং মাসে একদিন পুলিশের ডিউটি করতে হয়। নগরে চলাচল করা অটোরিকশায় পুলিশকে মাসোহারা এক হাজার টাকা করে দিতে হয়। এতে করে সড়কে চলাচলের জন্য ‘সাংকেতিক চিহ্ন’ হিসেবে মিলে স্টিকার।
আলাপরচিতায় এমন তথ্য দেন একাধিক অটোরিকশাচালক।
অভিযোগ রয়েছে, রেজি: নং-৭০৭ এর অধীনে শ্রমিক ইউনিয়নের নামে আসা সাংকেতিক টোকেনে চলে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশা। গাড়ির সামনে লাগানো সাংকেতিক স্টিকার থাকলেও চলাচল করা যায় সহসাই। ফলে নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে এসব যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে মহাসড়কেও।
সূত্র জানায়, সিলেট নগরেই ট্রাফিক পুলিশের অনেক কর্মকর্তা ও সদস্যের একাধিক অটোরিকশা, ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। মাঝেমধ্যে অভিযানের নামে হয় আইওয়াশের জন্য। গত শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সিলেট-তামাবিল সড়কে অভিযান চালিয়ে নম্বরবিহীন ৬টি অটোরিকশা জব্দ করেছে জেলার জৈন্তাপুর থানা পুলিশ। একইভাবে রোববার নগরের টুকেরবাজার এলাকায়ও অভিযান চালায় এসএমপি পুলিশ।
সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা ও মিডিয়া) আমিনুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধে হাইওয়ে পুলিশ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা। কিন্তু তাদের লোকবল কম থাকায় অধিক্ষেত্রগুলো জেলা পুলিশকে দেখতে হয়। এজন্য মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও মহাসড়কে অটোরিকশা বন্ধ করা যাচ্ছে না। আর যে সময়ই অভিযান হয়, সেসব অভিযানে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশাও জব্দ করা হয়েছে।
সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (ট্রাফিক) নিকোলিন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, নগর এলাকার অধিভুক্ত মহাসড়কে অটেরিকশা চলাচল বন্ধে বার বার অভিযান চালানো হচ্ছে। এই পর্যন্ত হাজারের ওপরে অটোরিকশা, সহস্রাধিক ইজিবাইক ও কয়েক হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা জব্দ করা হয়। কিন্তু ডাম্পিংয়ের স্থান না থাকায় মামলা দিয়ে, মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। ফলে আবারও রাস্তায় বেরোচ্ছে গাড়িগুলো। সমিতির টোকেনে এসব অটোরিকশা চলাচল করে। যদি পুলিশ জড়িত থাকে, তবে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
এনইউ/এএটি