কেন্দ্রটির সব সুবিধা পেতে নূন্যতম একটি ফি (অফেরত যোগ্য ১৩০ টাকা ও ফেরতযোগ্য জামানত ১০০ টাকা) দিয়ে ভর্তি হতে হয় প্রশিক্ষণার্থীদের। এরপর আবাসিকে থাকা-খাওয়াসহ প্রশিক্ষণের সব ধরনের খরচ সরকারের পক্ষ থেকে ব্যয় করা হয়ে থাকে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিন মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণের ৯৫তম ব্যাচ বর্তমানে কেন্দ্রেটিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এছাড়া কেন্দ্রটিতে রয়েছে এক মাস মেয়াদি বেশকিছু কোর্সও। আর শুরু থেকে এ পর্যন্ত সব কোর্স সম্পন্ন করেছেন প্রায় ১০ হাজার প্রশিক্ষণার্থী।
এদিকে, পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় কেন্দ্রটিতে যেমন প্রশিক্ষণার্থীরা স্বাভাবিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনকি বিষয়বস্তুরও সংকট থাকায় বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণও নিতে পারছেন না যুবকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাঁচ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির (যুব ভবন) সংস্কারের প্রয়োজন। কেন্দ্রটির একাডেমিক ভবনের ক্লাসরুমসহ নিচ তলার ফ্লোরের বেশিরভাগ জায়গা দেবে গেছে। টিনশেড একাডেমিক ভবনের সিলিংয়ে ব্যবহৃত বোর্ড ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ভাঙ্গা দরজা-জানালায় ও বাথরুমগুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। বাথরুমের পাইপগুলো ছিদ্র হয়ে অনবরত পানি ঝড়ছে।
ছেলেদের জন্য তিনতলা আবাসিক হোস্টেলের জানালা ও বারান্দার লোহার গ্রিলগুলো মরিচা ধরে খয়ে যাচ্ছে। এমনকি আবাসিক হোস্টেলের রুম গুলোর পলেস্তারা খসে পড়ছে। ভবনের অনেক কলামের ঢালাইয়ে ধরেছে ফাটল। এছাড়া ভবনগুলোর বেশিরভাগ টয়লেট ও বাথরুম ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাথরুমের পাইপগুলো ছিদ্র হয়ে অনবরত পানি ঝড়ছে। তিনতলার ছাদে বৃষ্টির পানি জমে চুইয়ে চুইয়ে নিচের রুমে ঝড়ে পড়ছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে কেন্দ্রটির দোতলা বিশিষ্ট ছাত্রী হোস্টেল ও কর্মকর্তাদের ডরমিটরিতে।
ছাত্রদের সরকারিভাবে বিছানা, চেয়ার-টেবিল, তোষক ও ফ্যান দেওয়া হলেও সেগুলো অনেক পুরাতন হয়ে গেছে। এতো খারাপ অবস্থার মধ্যে ছাত্ররা আবাসিক হোস্টেলে থাকলেও ছাত্রীরা থাকেন কেন্দ্রটির বাহিরে। যদিও ছাত্রী হোস্টেলের নিচ তলায় পাঁচ শত টাকা ভাড়ার বিনিময়ে কেন্দ্রটির দু’জন কর্মচারীর পরিবার কোনো ভাবে থাকছেন। একইভাবে ডরমিটরির দোতলায়ও কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা দু’টি ফ্ল্যাটে থাকছেন।
সীমানা প্রাচীর থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির গার্ড রুম, পানির পাম্প রুম, মসজিদসহ সবকিছুরই বেহাল দশা। এমনকি প্রশিক্ষণার্থীদের ব্যবহারিকের জন্য তৈরি গোয়াল ঘর, হাঁস-মুরগির শেড, হ্যাচারি-পানির ট্যাংকি সবকিছুই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। গোয়ল ঘরে কোথাও মাটি ডেবে গেছে, দেয়াল ফেটে বিশাল ফাঁকা হয়ে গেছে। আর বাকিগুলোর প্রয়োজন সংস্কার। এছাড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির পুরো এলাকাতেই জঙ্গলের কারণে রাস্তা দিয়ে হাঁটা-চলাও দায়।
এর কারণ হিসেবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির দায়িত্বরতরা বলছেন, প্রলংকারী ঘুর্ণিঝড় সিডরের পর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির বেহাল দশা শুরু হয়। ওই সময় কেন্দ্রটির ভেতরের গাছপালা উপড়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থাপনার নিচের মাটি সরে যাওয়া ও সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে পড়াসহ কেন্দ্রটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর সীমানা প্রাচীর সংস্কার করা হলেও অন্য স্থাপনায় কোনো কাজ হয়নি। ১৯৯৬ সালে কেন্দ্রটিতে প্রশিক্ষণ চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সংস্কারই সরকারিভাবে করা হয়নি। আর সংস্কার না হওয়ার কারণে এখন অনেক উদ্যোগ নিতেই ভয় পাচ্ছেন দায়িত্বরতরা।
এরপরও কেন্দ্রটিতে ২১ জনের মধ্যে ১৫ জনের যে জনবল রয়েছে সেখানেও গার্ড, ক্লিনার কিংবা মালি পদে কেউ নেই। আবার বাবুর্চি পদে বেশি কয়েকজন জনবল থাকলেও সেখানেও রান্নার মান নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। এছাড়া যারা রয়েছেন তারা স্ব-স্ব কাজ করে অতিরিক্ত কোনো দায়িত্ব পালনে রাজি নন। যদিও তারা বলছেন, আবাসন সুবিধা না থাকায় কর্মঘণ্টা শেষে তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে হয়। কারণ কারো বাড়িই কেন্দ্রটির আশেপাশে নয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, সরকার আবাসনের ব্যবস্থা করলেও তা এখন ব্যবহারের অনুপযোগী, মাথাপিছু প্রতিদিন একজন শিক্ষার্থীর পেছনে ১০০ টাকা খাওয়া বাবদ খরচ করছে। তারপরও কেন্দ্রের বেহাল দশার কারণে এখানে আসতে ও থাকতে অনেকেই ভয় পান। এমনকি বেহাল দশার কারণে গবাদি পশু, হাঁস ও মাছ সরবরাহ করা হচ্ছে না কেন্দ্রটিতে। ফলে ব্যবহারিক শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
এ বিষয়ে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কো অর্ডিনেটর মো. সিদ্দিক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে কেন্দ্রের এমন দশা। তারপরও আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণার্থীরাও ভর্তি হচ্ছেন এখানকার বিভিন্ন কোর্সে। সমস্যার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অকিবহাল রয়েছেন।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ শোয়েব ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) কেন্দ্রটি পরিদর্শন করার পর এটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলেছেন। তারাও কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছেন। আশা করি দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
এমএস/আরআইএস/