নির্যাতনের শিকার ছাত্রের চোখ দু’টি নষ্ট হওয়ার উপক্রম বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বর্তমানে শিশুটি ঢাকার ফার্মগেটস্থ খামারবাড়ি রোডের ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
এ ব্যাপারে মোজাম্মেলের বাবা বাদী হয়ে নিযার্তনকারী শিক্ষক হাফেজ নাঈম আহমেদ ও তার বাবা এবং মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা তাজুল ইসলাম আলফুকে আসামি করে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত ১০টায় নির্যাতনের শিকার মোজাম্মেলের বরাত দিয়ে তার মা রেহানা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, সম্প্রতি মাদ্রাসার অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গে একটি বাড়িতে দাওয়াত খেতে যায় মোজাম্মেল। সেখান থেকে মোজাম্মেলকে ২০ টাকা উপহার দেওয়া হয়। দাওয়াত খেয়ে মাদ্রাসায় ফিরে এলে লুডু কেনার জন্য ২০ টাকা দিয়ে দিতে মোজাম্মেলকে বলেন শিক্ষক হাফেজ নাঈম। এতে সম্মত না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষক হাফেজ নাঈম ছেলেটিকে এই অমানুষিক নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রেহানা খাতুন আরও জানান, প্রথমে গামছা দিয়ে মোজাম্মেলের চোখ বেঁধে অসংখ্য বেত্রাঘাত করা হয়। পরবর্তীতে অন্যান্য ছাত্রদের দিয়ে হাত পা ধরিয়ে রেখে প্রায় আধাঘণ্টা ধরে নির্যাতন চলে তার ওপর। একপর্যায়ে প্রায় ৫ ফুট ওপর বারান্দা থেকে মাঠে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয় মোজাম্মেলকে। নির্যাতনের বিষয়টি মা ও বাবাকে জানালে মোজাম্মেলকে জানে মেরে ফেলার হুমকিও দেন শিক্ষক নাঈম।
মোজাম্মেলের বাবা বিল্লাল মিয়া জানান, চিকিৎসকরা একাধিকার পরীক্ষা করে বলেছেন চোখ দু’টি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমপক্ষে এক মাস ধরে চিকিৎসা করলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া শরীরজুড়ে আঘাত থাকার কারণে বাইরে গিয়ে অন্য চিকিৎসক দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বিল্লাল আরও জানান, আমি পেশায় একজন গরুর পাইকার। ইতোমধ্যে ছেলের চিকিৎসার জন্য ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এত ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যেতে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধারদেনা করা হচ্ছে। নির্যাতনকারী শিক্ষকের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন আহত মোজাম্মেলের বাবা ও মা।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, নির্যাতনকারী শিক্ষক ও মাদ্রাসার প্রিন্সিপালকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন মোজাম্মেলের বাবা। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
নির্যাতনকারী শিক্ষকের বাবা তাজুল ইসলাম আলফু জানান, আমি একটি ব্যাংক চাকরি করি। ঘটনার পর থেকে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। এ ব্যাপারে কোনোও মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
গত ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে মাদ্রাসায় বসে লুডু খেলছিলেন শিক্ষক হাফেজ নাঈম আহমেদ। এ সময় মোজাম্মেল গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে চায়। তখন বিরক্ত হয়ে মোজাম্মেলকে বেধড়ক বেত্রাঘাত শুরু করেন শিক্ষক। মারধরে ছেলেটির দুই চোখ থেঁতলে যায়। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থান বেতের আঘাতে রক্তাক্ত হয়। পরদিন মোজাম্মেলের মাকে মাদ্রাসা থেকে জানানো হয়, তার ছেলে দুর্ঘটনায় ব্যথা পেয়েছে। ছুটে এসে ছেলেকে মারাত্মকভাবে আহত দেখে নিয়ে যাতে চান তিনি। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রথমে নিয়ে যেতে না দিলেও পরবর্তীতে তোপের মুখে পড়ে মায়ের সঙ্গে দিয়ে দেন মোজাম্মেলকে। ওইদিনই তাকে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কর্তব্যরত চিকিৎসক চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেন। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) তাকে হবিগঞ্জ আধুনিক চক্ষু হাসপাতালে নিলে তাকে সেখান থেকে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে মোজাম্মেলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯
এএটি