ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অভিযান বন্ধ না হলে অনশনে যাওয়ার হুমকি রিকশাচালকদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯
অভিযান বন্ধ না হলে অনশনে যাওয়ার হুমকি রিকশাচালকদের

বরিশাল: বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উচ্ছেদের অভিযান বন্ধ না করলে আগামী ২ অক্টোবর থেকে আমরণ অনশনে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শ্রমিকরা।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বরিশাল নগরের ফকিরবাড়ি রোডস্থ নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানায় রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক সুশান্ত সুকুল।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গত ১৯ আগস্ট থেকে বরিশাল শহরে দফায় দফায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উচ্ছেদের নামে নির্মম প্রশাসনিক অভিযান চলছে। প্রায় দুই মাসব্যাপী এই অভিযানে এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আটক করা হয়েছে এবং প্রায় প্রতিটি গাড়ির ব্যাটারি-মোটর খুলে রাখা হয়েছে। যেগুলোর আনুমানিক মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। এই বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি দরিদ্র রিকশাচালকরা শিকার হয়েছে নানাবিধ আর্থিক হয়রানি ও নির্যাতনের।  

গত ৮ বছর ধরে বরিশালে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি আদায়ের জন্য আমরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছি। আন্দোলনের একপর্যায়ে সিটি করপোরেশন ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু নিয়ম মেনে এইসব ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।  

এই প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে গত এক বছর ধরে যানজটপূর্ণ রাস্তা ছাড়া বাকি রাস্তাগুলোতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে আমরা জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলাম। কিন্তু গত ১৯ আগস্ট থেকে পরিচালিত মাসব্যাপী এই অভিযান আমাদেরকে পথে বসিয়ে দিয়েছে, সর্বশান্ত করেছে। তিনবেলা খাবার তো জুটছেই না, এনজিওর ঋণ শোধের বিষয়টা তো বলাই বাহুল্য।

তিনি আরও বলেন, আমরা দরিদ্র রিকশাচালকরা আমাদের শ্রম কমাতে ও প্রযুক্তির সহায়তা নিতে এনজিও থেকে ৪০-৫০ হাজার টাকা ঋণ করে রিকশায় ব্যাটারি লাগিয়েছি। এই ব্যাটারি সরকারের অনুমতি সাপেক্ষেই আমদানি হয়েছে। সারাদেশে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় এই রিকশাগুলোর লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।  

কিন্তু বরিশালে মান্ধাতার আমলের ‘মোটর ভেহিকেল অ্যাক্ট’ এর অজুহাত দেখিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া এক রায়ের কথা বলে এগুলো উচ্ছেদ করা হচ্ছে। অথচ সেই আইন প্রণয়নের সময় ব্যাটারিচালিত যানবাহনের কোনো অস্তিত্বই ছিল না।  

সুশান্ত সুকুল বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়র ক্ষমতায় আসার পরপরই আমরা তার সঙ্গে দেখা করেছি। আবেদন করেছি আমাদের জীবিকা রক্ষার। তিনি শতাধিক রিকশা শ্রমিকদের সামনে বলেছেন, তার শহরে গরীব মরবে না, রিকশা চলবে। অথচ আমরা শুনতে পেয়েছি বর্তমানে প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের যৌথ সিদ্ধান্তে এই নির্মম অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।  

এরপর বারবার আমরা সিটি মেয়রের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও এই দুইমাসে দুভার্গ্যবশত তার সাক্ষাৎ পাইনি। পুলিশ কমিশনার, ডিসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেও আমাদের যুক্তিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।

রিকশাশ্রমিকদের উপদেষ্টা ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী বলেন, গত দুমাস যাবৎ আমাদের রিকশাশ্রমিকদের জীবিকা বন্ধ, নির্যাতন-নিপীড়নের পরও আমরা সবসময়ই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে আসছি। মানববন্ধন, সমাবেশ, স্মারকলিপি পেশ, শ্রমিকদের সন্তানদের মানববন্ধন, বরিশালবাসীর গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, নাগরিক সমাবেশ, প্রচারপত্র বিলি করে আসছি।  

‘যেহেতু সারাদেশে এই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে, তাই শহরের ব্যস্ততম রাস্তা বাদ দিয়ে এই রিকশা চললে কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া বিকল্প কর্মসংস্থান ছাড়া এধরনের উচ্ছেদ অভিযান বরিশালের স্থিতিশীলতার জন্যও ভালো ফল বয়ে আনবে না। ’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- ইউনিয়নের সভাপতি দুলাল মল্লিক, ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক-শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির সভাপতি শাহজাহান মিস্ত্রি, জাহাঙ্গীর হোসেন দিদার, শহীদুল ইসলাম, জাকির হোসেন, বাবুল তালুকদার, মহসিন মীর প্রমুখ।

বাংলা‌দেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, সে‌প্টেম্বর ২৯, ২০১৯
এমএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।