ঢাকা, সোমবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এক ছাগল থেকে শুরু, এখন লাখপতি আয়েন মিয়া

শাহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
এক ছাগল থেকে শুরু, এখন লাখপতি আয়েন মিয়া ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী আয়েন মিয়া। ছবি: বাংলানিউজ

জয়পুরহাট: জয়পুরহাট সদর উপজেলার পাকার মাথা বিসিক শিল্প নগরী এলাকার বাসিন্দা। বাবার নাম সাইফুল ইসলাম। আদি নিবাস উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী গ্রামে। ১৯৯৭ সালে জয়পুরহাটে আসেন তিনি। ২০০০ সালে বিয়ে করে জয়পুরহাট বিসিক শিল্প নগরী এলাকাতেই বসবাস শুরু করেন। এখন তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে।

যার পরিচয় দেওয়া হলো, তার নাম আয়েন মিয়া। একসময় দারিদ্র্যের কষাঘাতে কোনো রকমে জীবন কাটিয়েছেন তিনি।

কিন্তু, এখন দিন বদলেছে তার। পাল্টে গেছে জীবনধারাও। আর এই পাল্টে যাওয়া আয়েন মিয়ার গল্পটা শুরু একটি মাত্র ছাগল থেকে।

সম্প্রতি কথা হয় আয়েন মিয়ার সঙ্গে। শোনালেন তার বদলে যাওয়া দিনের গল্প। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কুড়িগ্রাম থেকে জয়পুরহাটে এসে বিসিকের নৈশপ্রহরী হিসেবে কাজ করি। সেসময় স্বল্প আয়ে সংসার যেন থেমে যাওয়ার উপক্রম। একসময় অনেক চিন্তা করে জয়পুরহাটের নতুন হাট থেকে ১৫শ’ টাকায় একটি ছাগল কিনে লালন-পালন শুরু করলাম। মাত্র ছয় মাসের মাথায় ছাগলটি দু’টি বাচ্চা দেয়। সেখান থেকে একটি বিক্রি করে দেই। পরে, এক বছরের মাথায় আরও দু’টি খাসি পেলাম। এভাবেই দিনের পর দিন ছাগলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলো।  

গত কোরবানির ঈদে বেশ কয়েকটি বিক্রির পরে এখন আয়েন মিয়ার উন্মুক্ত খামারে বিভিন্ন প্রজাতির ২২টি ছাগল রয়েছে, যেগুলোর বাজারমূল্য কমপক্ষে ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এসব ছাগল কোনোটা বাচ্চা, কোনটা গর্ভবতী, আবার কোনোটা মাত্র মা হয়েছে। দিনের বেলায় রাস্তার দুই ধারে উন্মুক্তভাবে চরানো হলেও রাতে বাড়ির পাশে মাচাং ঘরে রাখা হয়। আর খাওয়ানো হয় ঘাস, লতা-পাতা, ভূষি, ভাতের মাড় প্রভৃতি।  

তবে, আয়েন মিয়ার আক্ষেপ, দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে এতগুলো ছাগল পালন করলেও একদিনের জন্যেও স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী খোঁজ নিতে আসেননি। কোনো ছাগল অসুস্থ হলে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ কিংবা বড় সমস্যা দেখা দিলে নিজেই ভ্যানযোগে পশু হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি।

একটি থেকে শুরু করে ২২টি ছাগলের মালিক আয়েন মিয়া।  ছবি: বাংলানিউজ

আয়েন মিয়া বলেন, প্রতি মাসে একটা-দু’টো করে ছাগল বিক্রি করে যে টাকা পাই, তা দিয়েই চার ছেলেমেয়ের লেখাপড়া চালাই। বড় ছেলে রিয়াদ ও মেজো ছেলে আরাফাত আক্কেলপুর মুজিবুর রহমান ডিগ্রী কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ১ম এবং ২য় বর্ষের ছাত্র। ছোট দুই মেয়ে রুহী জয়পুরহাটে নূরানী মাদ্রাসায় ও রাহী মডার্ন স্কুলে পড়ছে।  

‘ছাগল পালন করে আয়েন মিয়ার জীবনটাই যেন পাল্টে গেছে’ বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। তার ব্যাপারে কথা বলেন প্রতিবেশী আসলাম, মোসলেমা, জাহিদুল, সুনীলসহ অনেকেই। তারা জানান, ছাগল পালন করে আয়েন মিয়া এখন পুরোপুরি স্বাবলম্বী। তাকে অনুসরণ করে অনেকেই এখন ছাগল পালন শুরু করেছেন।  

এ ব্যাপারে জয়পুরহাট সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, কেউ যদি ২০টির উপর ছাগল পালন করেন, তবে তিনি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত খামারি হিসেবে বিবেচিত হন। এ ক্ষেত্রে খোঁজ-খবর নিয়ে আয়েন মিয়াকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে যেন, ভবিষ্যতে তিনি আরও ভালো কিছু করতে পারেন।  

ছাগল পালনের অর্থ দিয়ে আয়েন মিয়া ইতোমধ্যেই বিসিক শিল্প নগরী এলাকায় পাঁচ শতক জায়গা কিনে চার কক্ষ বিশিষ্ট একটি পাকা বাড়ি বানিয়েছেন। চার সন্তানের লেখাপড়াও চলছে নির্বিঘ্নে। কোনো তফসিলি ব্যাংক কিংবা এনজিও থেকে সহজ শর্তে ঋণ পেলে সফল এই ছাগল পালনকারী ভবিষ্যতে বড় খামার গড়ে তুলবেন বলে আশায় বুক বেঁধেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ