সারাবিশ্বে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা এবং তার সহযোগীসহ রাজনৈতিক দলের অনেক ‘রাঘব বোয়ালেরও’ বিচার চলছে। অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে মাত্র ৬১ দিনের মাথায় নিষ্পত্তি হতে চলেছে মামলাটির।
নুসরাতের পরিবারের পক্ষে আদালতে লড়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ফেনী জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু। মামলাটির কার্যক্রম পরিচালনার ব্যাপারে বিশদভাবে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন এ আইনজীবী।
মামলাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার ব্যাপারে শাহজাহান সাজু বলেন, চলতি বছরের ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ২৮ মার্চ মামলা করেন নুসরাতের মা। ওই মামলাটির আইনজীবী ছিলাম। এরপর ১০ এপ্রিল থেকে নুসরাত হত্যা মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি।
শাহজাহান সাজু বলেন, আমারও তিনটা মেয়ে আছে, তারা লেখাপড়া করতে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যায়। আর কোনো মেয়েকে যেন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এমন নির্মমতার শিকার হতে না হয়। সেজন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আসামিদের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের জন্য আইনি লড়াইয়ে লড়েছি। এতে পারিশ্রমিক নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
আসামিপক্ষের আইনজীবীদের ব্যাপারে শাহজাহান সাজু বলেন, এ মামলাটি পরিচালনা করতে গিয়ে অনেক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনীজীবীরা অনেক সময় কোর্টের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করেছেন। কিছু আইনজীবী অশোভন আচরণও করেছেন। নিজের মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে নুসরাতের জন্য লড়ে গেছি, কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করিনি।
‘প্রথম দিকে ফেনী আইনজীবী সমিতির অনুরোধক্রমে জজকোর্টের সব আইনজীবী বলেছিলেন কোনো আসামির পক্ষে দাঁড়াবেন না। কিন্তু পরবর্তীতে সে কথার ব্যত্যয় ঘটেছে। আসামিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন কিছু আইনজীবী। ’
তিনি বলেন, ওই আইনজীবীরা সমিতির অনুরোধ উপেক্ষা করেছেন, নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি। প্রথমাবস্থায় অনেকে নুসরাতের পরিবারের পক্ষে থাকবেন বলে পরে আসামিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিবাদীপক্ষের কিছু আইনজীবী নির্লজ্জ মিথ্যাচারও করেছেন।
সরকারপক্ষের আইনজীবীর ব্যাপারে শাহজাহান সাজু বলেন, সরকারপক্ষের আইনজীবী ফেনী জজকোর্টের পিপি হাফেজ আহম্মদ সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছেন। যেন দোষী সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।
শাহজাহান সাজু বলেন, সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে এ মামলাটি স্বপ্রণোদিত হয়ে লড়েছি, অনেক সময় নিজের পকেট থেকে ব্যয় করেছি। নুসরাতের পরিবারকে এক টাকাও খরচ করতে হয়নি। একটা কাগজও কিনতে হয়নি।
মামলাটি পরিচালনার বিষয়ে ব্যতিক্রম কী? এমন প্রশ্নে জবাবে শাহজাহান সাজু বলেন, মামলাটি আমার আইন পেশার ‘বিরল অভিজ্ঞতা’, মাত্র ৬১ কার্য দিবসে ৮৭ আসামির সাক্ষ্যগ্রহণ এবং যুক্তিতর্ক গ্রহণ। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসেও নেই। এত অল্প সময়ের মধ্যে এমন চাঞ্চল্যকর মামলার নিষ্পত্তি একটি বিরল ঘটনা।
রায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা আশা করি সুবিচার পাবো, আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।
নুসরাত হত্যা মামলায় আইনি লড়াইয়ে অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজুর ভূমিকার ব্যাপারে মামলার বাদী নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাংলানিউজকে বলেন, একদম প্রথম থেকেই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তিনি। পারিশ্রমিক নেওয়াতো দূরের কথা বরং সার্বক্ষণিক আমাদের পরিবারের সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৯
এসএইচডি/এএটি/এইচএ/