রোববার (২০ অক্টোবর) রাতে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট না করতে এবং কোনো অবস্থাতেই ধর্মীয় উপাসনালয়ে আক্রমণ না করতে সাধারণ জনগণকে অনুরোধ জানাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।
হ্যাক হওয়া ফেসবুক আইডি থেকে কথিত কন্টেন্টের বিষয়ে বোরহানউদ্দিনে উত্তেজনা এবং এ বিষয়ে তাৎক্ষনিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে বার বার আশ্বস্ত করা হলেও স্বার্থান্বেষী মহল ধর্মকে পুঁজি করে সামাজিক অস্থিরতা তৈরীর অপপ্রয়াস চালিয়েছে।
ঘটনার নেপথ্যে...
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) রাতে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য (২৫) নামে এক যুবক নিজের ফেসবুক আইডি 'Biplob Chandra Shuvo’ হ্যাক হওয়ার প্রেক্ষিতে বোরহানউদ্দিন থানায় জিডি (নং-৪৪০) করেন। জিডি করার সময় থানায় অবস্থানকালেই বিপ্লবের নম্বরে একটি কল আসে এবং তার কাছে চাঁদা দাবি করা হয়।
বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে ওসিকে জানানো হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রযুক্তির সহায়তায় ওইদিন রাতেই বিপ্লবের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক ও চাঁদা দাবির দায়ে শরীফ এবং ইমন নামে দুই যুবককে আটক করা হয়।
এর মধ্যেই বিপ্লবের হ্যাক হওয়া ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে কথিত কমেন্টের জেরে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ফেইসবুকে ধর্মীয় মন্তব্যের অভিযোগে মন্তব্যকারীর ফাঁসি দাবি করেন স্থানীয় আলেম সমাজ।
এ বিষয়ে রোববার (২০ অক্টোবর) সকাল ১১টায় ঈদগাহ মাঠ ময়দানে তারা প্রতিবাদ সভার ঘোষণা দেন। এমতাবস্থায় শনিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বোরহানউদ্দিন থানায় স্থানীয় প্রশাসন জনপ্রতিনিধিসহ আলেম সমাজের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে। আলেম সমাজের অভিযোগের ভিত্তিতে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যকে আটকও দেখানো হয়।
এ বিষয়ে উপযুক্ত আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের নিশ্চয়তা পেয়ে প্রতিনিধিত্বকারী আলেম সমাজ তাদের পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচী বাতিল ঘোষনা করেন।
সমাবেশ বাতিলের ঘোষনা সত্ত্বেও পুলিশ সার্বক্ষনিক সতর্ক অবস্থানে থাকে। রোববার (২০ অক্টোবর) সকাল থেকেই কিছু লোক ঈদগাহ ময়দানে সমবেত হতে থাকে। ময়দানের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানোর জন্য ১৭টি মাইক আনে একটি মহল। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
সমবেত লোকজনকে সরিয়ে নিতে বললে উপস্থিত আলেমগণ নিশ্চিত করেন, লোকজন কোনো রকম বিশৃঙ্খলা করবে না। ইতোমধ্যেই, এই পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় এবং যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ও ইউএনও'র উপস্থিতিতে পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।
ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করে প্রয়োজনীয় সকল আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে পুলিশ বার বার আশ্বস্ত করে। এতে আশ্বস্ত হয়ে সমবেত লোকজন ঈদগাহ্ ময়দান ত্যাগ করেন। উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য শেষে পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত ডিআইজিসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা মাদ্রাসার একটি কক্ষে অবস্থান নেন।
এরই মধ্যে, অন্য একটি গ্রুপ ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশ করে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে উত্তেজিত করতে থাকেন। তারপর, একদল লোক বিনা উস্কানিতে মাদ্রাসার অফিস কক্ষে অবস্থানরত কর্মকর্তাদের উপর আক্রমণ করে। আক্রমণকারীদের একদল আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুলিশ ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপর আক্রমণ চালায়।
আক্রমণকারীদের গুলিতে পুলিশের একজন মারাত্মক জখম হয়। মারাত্বক আহত হন পুলিশের আরেক সদস্য। বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজিও আহত হন। এই পরিস্থিতিতে, ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে আত্মরক্ষার্থে ও সরকারী জানমাল রক্ষার্থে ও উত্তেজিত লোকজনকে নিবৃত্ত করতে প্রথমে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ও পরে শটগান চালায় পুলিশ। পরবর্তীতে, পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়।
আক্রমণকারীদের গুলিতে মারাত্মক আহত পুলিশ সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনায় নিহত চার জনের মধ্যে অন্তত দুই জনের মাথা ভোঁতা অস্ত্র দ্বারা থ্যাতলানো বলে নিশ্চিত করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
পুলিশ সদর দফতর জানায়, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সার্বিক ঘটনা পর্যালোচনায় পুলিশ জানায়, ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে শুরু থেকে তৎপর এবং আলেম সমাজ কর্মসূচী স্থগিত করলেও কোনো একটি স্বার্থান্বেষী মহল ধর্মকে পুঁজি করে সামাজিক অস্থিরতা তৈরীর অপপ্রয়াস চালিয়েছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলসহ সারাদেশে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৯
পিএম/এমএইচএম