পুলিশের একটি সূত্র বলছে, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে এ সহিংসতা ঘটানো হয়েছে। এতে ২০-৩০ জনের অধিক লোক জড়িত ছিল।
ভোলার পুলিশ সুপার (এসপি) সরকার কায়সার জানান, এখন পরিস্থিতি শান্ত। পুরো বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে পুলিশ। সহিংসতার ঘটনার তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ হয়েছে। সরাসরি ঘটনায় যারা যুক্ত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। রিমান্ডে থাকা এক আসামির কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তিনি ওইসব তথ্য প্রকাশ করেননি।
এদিকে, সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলাদা দু’টি তদন্ত প্রতিবেদন করা হয়। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদন শনিবার (২৬ অক্টোবর) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোও হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মাহমুদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কাজ শুরু করেছি। ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে থাকা বিভিন্ন জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি, আলেম সমাজের নেতা, হিন্দু প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়েছে। সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, সহিংসতার ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল। এ ঘটনা ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সহিংসতায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হবে। বিভিন্ন মিডিয়ার উঠে এসেছে ঘটনার সঙ্গে ছাত্রদল ও যুবদলের সম্পৃক্ততা রয়েছে। মিছিল থেকে ছাত্রদল সভাপতি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশ কাকে দেওয়া হয়েছিল সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নেপথ্যে যারা ছিল তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে।
এদিকে, সহিংসতার ঘটনায় আটক পাঁচ জনের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার পর প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে তাদের জিজ্ঞসাবাদ করছে পুলিশ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রিমান্ডে নেওয়া আসামিদের খুব শিগগির জিজ্ঞসাবাদ করা হবে।
পুলিশ জানায়, বোরহানউদ্দিনে সহিংসতার পর ২১ অক্টোবর থেকে ভোলায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে। একইসঙ্গে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আমর্ড পুলিশ ও কোস্টগার্ড মোতায়েন রয়েছে।
পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজ) এহসানুল হক জানান, সেসময় তিন ধরনের মানুষ উপস্থিত থাকলেও একটি গ্রুপ ছিল যারা সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে তারা। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব আসামিকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে।
জানা যায়, এ ঘটনার পর ওই এলাকায় এখনো গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশের ওপর হামলা মামলায় ৫ হাজার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৫ জন এবং হিন্দুদের বাড়িতে হামলার ঘটনায় ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে আসামিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছে।
উল্লেখ্য, বিপ্লব নামে এক যুবকের ফেসবুকে ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট দেওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ভোলাজুড়ে। যদিও তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল বলে দাবি করে আসছিল পুলিশ। এর প্রতিবাদে গত ২০ অক্টোবর প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয় ‘তৌহিদি জনতা’। সমাবেশ এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নিলে চারজন নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয় পুলিশসহ ৩৮ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১১২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৯
এনটি/এইচএ/