ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাজধানীতে গারোদের ওয়ানগালা উৎসব

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৯
রাজধানীতে গারোদের ওয়ানগালা উৎসব

ঢাকা: নতুন ফল ও ফসল ঘরে উঠবে। তার আগে কৃতজ্ঞতা জানাতেই হবে শস্যদেবতার প্রতি। কৃতজ্ঞতা জানানোর মাধ্যম ওয়ানগালা উৎসব। এটাই নিয়ম ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী গারো সম্প্রদায়ের। সেই নিয়ম রক্ষা করেই ‘মিশি সালজং’ বা দেবতাকে নতুন ফসলের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতি চেয়ে তারা পালন করে ওয়ানগালা বা নবান্ন উৎসব।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) ঢাকায় বসবাসরত গারো সম্প্রদায়ের লোকজন রাজধানীর বনানীর পূজা মাঠে দিনব্যাপী পূজা-অর্চনা করে নেচে-গেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করেছেন তাদের সবথেকে বড় সাংস্কৃতিক উৎসব ওয়ানগালা।

সকালে দেবতার উদ্দেশে ফসল উৎসর্গ এবং পূজার মাধ্যমে শুরু হয় উৎসব।

‘ওয়ানচি থক্কা’, ‘রুগালা’, ‘শশত সাত্তার’, ‘আমুয়া’র মতো গারোদের আদি ধর্মীয় আচার পালন করা হয় এই উৎসবে। পরে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে ঐতিহ্যবাহী জুম নাচ, নিজ ভাষায় গান ও গারো নাচ পরিবেশন করেন শিল্পীরা।

উৎসবের আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এই দেশ সবার। সব জাতির, বর্ণের, সমাজের, গোষ্ঠীর। বাংলাদেশে কোনো অবস্থাতেই কেউ ছোট নয়। সবার সমান মর্যাদা, সমান অধিকার। হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, আদিবাসী-বাঙালি—সবার রক্তের বিনিময়েই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।

তিনি বলেন, আজকে এখানে এই আয়োজন হচ্ছে বলেই তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে আমরা জানতে পারছি। কিছুদিন আগেই এ মাঠে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উৎসব হয়েছে, মুসলমানদের উৎসব হয়েছে। এই যে সবার সংস্কৃতির আদান-প্রদান, এটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং অসাম্প্রদায়িকতার উদাহরণ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সঞ্জীব দ্রং বলেন, আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি আমাদের গর্বের। কেননা আমরা আদিবাসীরাই সবথেকে বেশি সামাজিক সম্পদগুলো রক্ষা করি। আমরা ছোট নয়, আমাদের যা কিছু আছে, সবই গর্বের। আর একটি রাষ্ট্র কতটা ভালো চলছে, উন্নয়ন হচ্ছে তা বোঝা যাবে ওই দেশের সংখ্যালঘুরা কেমন আছেন তার ওপর। তাই রাষ্ট্র পরিচালনে সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন অপরিহার্য।

এদিকে, ওয়ানগালা উৎসব উপলক্ষে বসেছে জমজমাট মেলা। মেলায় গারোদের ঐতিহ্যবাহী জিনিস ও শিশুদের নানা রকমের খেলনা বিক্রি করা হয়। ফলে এখানে গারো শিশু ও যুবক-যুবতীরা বিভিন্ন পসরার দোকানে তাদের পছন্দের জিনিস কিনতে ভিড় করেন।

উৎসব উপলক্ষে সমবেত হওয়া কয়েক হাজার গারো শহুরে জীবনের ব্যস্ততার ফাঁকে দিনভর নিজেদের মতো করে আনন্দ-উৎসবে মেতে থাকেন। মাঠে স্টলগুলোতে ঘুরে তারা নিজেদের সব ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নেন। কেউ কেউ আবার বাসার জন্য কিনে নেন জুমের আলু, কুমড়া, বিভিন্ন বুনো শাকসবজি। সংগ্রহ করেন দকমান্দা, দকসারি, থাংকা সরা, রিকমাচ্চুর মতো ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও অলংকার।

ওয়ানগালা অনুষ্ঠানের নকমা (প্রধান) শুভজিৎ সাংমার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বিশিষ্ট সাংবাদিক নিখিল মানকিন প্রমুখ।

গারোরা মূলত প্রকৃতিপূজারী ছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় গারোরা ধীরে ধীরে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রথাটি এখন ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে একত্রিত করে পালন করা হয়। এক সময় তারা তাদের শস্যদেবতা মিসি সালজংকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করলেও এখন তারা নতুন ফসল কেটে যিশুখ্রিস্ট বা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৯
এইচএমএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।