ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঘুষ-বাণিজ্যের কেন্দ্র কিশোরগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৯
ঘুষ-বাণিজ্যের কেন্দ্র কিশোরগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস!

কিশোরগঞ্জ: ঘুষ ছাড়া নড়ে না কিশোরগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের কোনো ফাইল। অফিসের সংঘবদ্ধ চক্রের হাতে জিম্মি পাসপোর্ট জেলাটির প্রত্যাশীরা। পিয়ন থেকে শুরু করে প্রধান কর্মকর্তা পর্যন্ত সবাইকে নানা অজুহাতে দিতে হয় ঘুষ। না দিলে অন্তহীন ভোগান্তি। শুধু তাই নয়, শারীরিক লাঞ্ছনাসহ নানা ভয়ভীতি দেখানো হয় পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের। যে কাজে আবার ব্যবহার করা হয় স্থানীয় দালালদের। সবমিলে কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এখন ঘুষ-বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে!

ভাড়াবাড়ি থেকে স্থায়ীভাবে বড় পরিসরে নিজস্ব ভবন নিয়ে শহরতলীর কাটাবাড়িয়া এলাকায় এখন কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। এখানে পাসপোর্ট করতে গিয়ে রীতিমতো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সবাইকে।

আবেদন ফরমে সব ঠিক থাকার পরও নানা ছুতোয় টাকা চেয়ে বসেন অফিসের কর্মকর্তারা। আবার পুলিশি যাচাই-বাছাইয়ের নাম করেও নেওয়া হয় আলাদা টাকা। এভাবেই চলছে পাসপোর্ট অফিসটি। জেলা প্রশাসনসহ নানা জায়গায় অভিযোগ করেও মিলছে না কোনো প্রতিকার। সবাই যেনো “ম্যানেজড’।

জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি অনিয়মের অভিযোগ পাসপোর্ট অফিসটির অফিস সহকারী মামুন সিরাজুল হকের বিরুদ্ধে। তিনি নিরাপত্তা কর্মীর (পুলিশ ও আনসার) মাধ্যমে চ্যানেল ফি’র নামে প্রত্যেকটি ফাইল থেকে ১২০০ টাকা করে নেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এ নিয়ে কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করতে গেলে পাল্টা হুমকি-ধামকি দেওয়ার পর করা হয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। বছরের পর বছর পড়ে থাকা পাসপোর্ট আবেদনকারীরা জানতেও পারেন না, কী কারণে তার পাসপোর্ট হয়নি। আর এই ধরনের পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে হন লাঞ্ছনার শিকার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাসপোর্ট ফরমে সবকিছু ঠিক থাকার পরও কর্মকর্তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পুনরায় ফরম পূরণ করে জমা দেওয়ার কথা বলেন। পরে দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্যরা এমন পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে নিজেরা ফরমটি ঠিক করে দেবেন বলে জানান। এসব কাজে স্থানীয় দালালদের লাগানো হয়। সবশেষ চ্যানেলের মাধ্যমে না গেলে আবেদন ফাইল স্বাক্ষর হয় না। ফলে পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা বাধ্য হন দালাল ও চ্যানেল ধরতে।

হোসেনপুর উপজেলার বাসিন্দা পাসপোর্ট প্রত্যাশী যুবক নাদিম পাসপোর্টের খোঁজ করতে গিয়ে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে শারীরিক লাঞ্ছনাসহ নানা ভয়ভীতির শিকার হয়েছেন অফিসে। এমন ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে নাদিম তার বাবাকে নিয়ে বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদের কাছে গিয়ে বিচার প্রার্থী হন। এরপর পুরো ঘটনা শুনে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার কাছে নাদিমকে পাঠান তিনি। সেখানে গেলে ঘটনা শুনে এডিএম পাসপোর্ট অফিসের প্রধান কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।

এরপর বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে এডিএম অফিসে নাদিমসহ কয়েকজন ভুক্তভোগী নিয়ে আসার কথা বলে সবাইকে বিদায় দেন এডিএম মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার পর নাদিমসহ কয়েকজন ভুক্তভোগী এডিএমের অফিসে গেলে মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা পাসপোর্ট অফিসার এখানে আসবেন না বলে সবাইকে বিদায় দেন। এ ব্যাপারে এডিএম বাংলানিউজকে বলেন, পাসপোর্ট অফিসার না আসায় বিষয়টি সমাধান করা যায়নি।

বাংলানিউজকে ভক্তভোগী নাদিম বলেন, পাসপোর্ট আনতে গিয়ে পাইনি। বরং অপমান অপদস্থ হয়েছি। এরপর প্রশাসনের কাছে গিয়েও সুবিচার পেলাম না। শেষপর্যন্ত ঘটনা জানিয়ে জেলা প্রশাসকসহ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ডিজি ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ময়মনসিংহ কার্যালয়ে আমিসহ আরেকজন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।

শুধু নাদিম নয়, হোসেনপুর উপজেলার সুজন মিয়া, নিকলী উপজেলার দেলোয়ারসহ অনেকেই পাসপোর্ট পেতে গিয়ে হয়েছেন নানা রকমের হয়রানির শিকার। ২০১৭ সালে পাসপোর্টের আবেদন করে আজও নিজেদের পাসপোর্ট পাননি তারা।

এসব অভিযোগ নিয়ে কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। অফিসের কাজে-কর্মে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৯
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।