এদিকে বালু উত্তোলন নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে কৃষকদের হয়রানি করারও অভিযোগ রয়েছে।
রোববার (৩ নভেম্বর) উল্লাপাড়া উপজেলার আলোকদিয়া, আমডাঙ্গা, বাদুল্লাপুর ও কামারখন্দের ধামকৈল এলাকায় সরেজমিনে গেলে নদীর পূর্ব তীরে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন ও পশ্চিম তীরে কৃষিজমি ভেঙে পড়ার চিত্র দেখা যায়।
উপজেলা ভূমি অফিস ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর ফুলজোড় নদীর আলোকদিয়া মৌজার বালুমহালটি হেলাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি ইজারা নিয়ে নারায়ণগঞ্জের জাকির হোসেন নামে এক বালু ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। উত্তোলন শুরুর অল্প দিনেই মহালের বালু শেষ হয়। পরে তারা তীরবর্তী মহালের বাইরে আলোকদিয়া, বাদুল্লাপুর, আমডাঙ্গা ও ধামকৈল মৌজার কৃষিজমি থেকে বালু উত্তোলন করতে থাকে। এতে কৃষকরা প্রতিবাদ করায় বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আলোকদিয়ার স্কুল শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বলেন, গত ৩০ আগস্ট নির্ধারিত মহালের বালু শেষ হলে পার্শ্ববর্তী মৌজার কৃষিজমির মাটি কাটতে শুরু করে ব্যবসায়ীরা। এতে বাধা দিতে গেলে বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে গ্রামবাসীর সঙ্গে তাদেরও সংঘর্ষ হয়। এসময় পুলিশের রাবার বুলেটে ৬ গ্রামবাসী আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১৬ জন কৃষকের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা শতাধিক আসামি করে মামলা দায়ের করে। এছাড়াও ইজারাদারদের পক্ষ থেকে দু’টি চাঁদাবাজির মামলাও দায়ের করা হয়। এসব মামলায় নিরীহ কৃষকদের আটক করে হয়রানিও করা হয়।
এরপর ওই মহাল থেকে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর রাতের আঁধারে ফের বালু তোলা শুরু হয়। স্থানীয় কৃষকেরা বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করলেও বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকে।
সরেজমিনে কথা হয় আলোকদিয়া এলাকার শফিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, আব্দুর রহমানসহ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে।
তারা বলেন, দীর্ঘ এক মাস ধরে ৪টি ড্রেজার বসিয়ে রাতের আঁধারে বালু তোলা হচ্ছে। ফলে আমাদের রেকর্ডীয় সম্পত্তি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। গত এক মাসের ব্যবধানে ২০ বিঘারও বেশি জমি নদীতে চলে গেছে। রোববার থেকে দিনেই ড্রেজার চালানো হচ্ছে।
আব্দুর রহমান বলেন, আমার দাদার নামে রেকর্ডকৃত দুই দাগে মোট ১১০ শতক জমি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে। শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার বাবার নামে রেকর্ডীয় ৩৪ শতক জমি বিলীন হয়ে গেছে। আরও ৭২ শতক জমি হুমকির মুখে রয়েছে।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ১০ বিঘা জমিতে আমি পেয়ারার বাগান করেছি। বালু উত্তোলনের ফলে পেয়ারার বাগানটি এখন হুমকির মুখে রয়েছে।
এসব কৃষকদের অভিযোগ, ইজারাদারের পক্ষ থেকে আমাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত একটি টাকাও তারা দেননি।
এদিকে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে নদীর পূর্বপাড় কামারখন্দ থানার ধামকৈল এলাকায় গত শনিবার দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ ক’জন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। এ নিয়ে ফুলজোড় নদীর দু’পাড়ে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উল্লাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুব হাসান বাংলানিউজকে জানান, বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে গেলে সেখানে ড্রেজার বা বালু উত্তোলনকারীদের পাওয়া যায়নি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) চৌধুরী মো. রাব্বী বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় দেড় মাস আগে আলোকদিয়া এলাকায় বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে। ইজারাদার নিজেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে রাতের আঁধারে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। এমন হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ইজারাদার জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ড্রেজার চালক রিপন মিয়া ও আলম বলেন, আমরা ইজারাদারের নির্দেশে গত এক মাস ধরে রাতেই বালু উত্তোলন করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৯
আরএ