পুরাতন জীর্ণ বস্ত্রে প্রস্তুত রং-বেরঙের সুতা দিয়ে সুনিপুণ হাতে গড়া গ্রাম-বাংলার বধূ-কন্যাদের মনের মাধুরি মেশানো অনুভূতি দিয়ে নান্দনিক রূপ-রস ও বর্ণ-বৈচিত্র্যে ভরা এই নকশিকাঁথা। যে শিল্পে মুগ্ধ হয়ে পল্লীকবি জসীম উদ্দীন রচনা করেছেন তার অনবদ্য কাব্যগ্রন্থ ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’।
নকশিকাঁথায় বাঙালির আলাদা ভালোবাসা থাকলেও বিভিন্ন কারণে এই কাঁথা এখন আর চোখে পড়ে না আগের মতো। আধুনিকতার ছোঁয়ায় হাতের সেলাইয়ে গড়া এই নকশিকাঁথার ঐতিহ্য আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তব এই লুপ্তপ্রায় পণ্যটি যখন শহুরে বাঙালিরা আগ্রহভরে খোঁজেন, তখনই এর দেখা মিললো রাজধানীর উন্নয়ন মেলায়।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে উন্নয়ন মেলায় অংশগ্রহণ করা বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা যায়, একাধিক স্টল পসরা সাজিয়েছে ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথা দিয়ে। বিভিন্ন ধরনের অলংকরণে সুই সুতোর ফোঁড়ে এসব কাঁথা হয়ে উঠেছে একেকটি গল্প।
নানা রকমের ফুল-ফল, পশু-পাখি, গাছ-পালা ও প্রকৃতির ডিজাইনে গড়া প্রতিটি নকশিকাঁথা। আছে কলকি আর বৃত্ত বা চতুর্ভুজাকার ডিজাইনও। লাল-নীল-হলুদ-সাদা বিভিন্ন রঙের কাপড়ের উপরে রঙিন সুতোয় আঁকা হয়েছে বিভিন্ন গল্প, অলংকার।
মেলা ঘুরে শাহিদা পারভিন নামে এক ক্রেতা বলেন, বড় বড় কারখানায় তৈরি দেশি-বিদেশি রং-বেরঙের রেডিমেট কাঁথা-কম্বলের ভিড়ে গ্রাম-বাংলার এই দেশীয় শিল্পটি যেন হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাঙালিদের কাছে এর আলাদা একটি সমাদর রয়েছে, ভালোবাসা আছে। আর তারচেয়েও বড় কথা, নকশিকাঁথা গায়ে জড়িয়ে যতটা আরাম করে ঘুমানো যায়, তা অন্য কিছুতে হয় না। এটা শুধু ঐতিহ্য নয়, গুণগতমানের দিক থেকেও অনন্য।
আর বিক্রেতারা জানান, হারানো এই ঐতিহ্যকে নতুন করে ফিরিয়ে আনতেই কাজ করে যাচ্ছেন তারা। গ্রামের নারীদের কাছে থেকে নকশিকাঁথাগুলো করে নিয়ে এসে বিক্রি করছেন শহরে। এতে সুবিধা দু’পক্ষেরই।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, ছোট-বড় আকার এবং ডিজাইন ও কাপড়ের উপর ভিত্তি করে নকশিকাঁথাগুলোর দাম পড়বে ৪শ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৯
এইচএমএস/এএ