ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খাসিয়াদের ভূমি সুরক্ষা দিতে হবে: খুশি কবীর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৯
খাসিয়াদের ভূমি সুরক্ষা দিতে হবে: খুশি কবীর

ঢাকা: অন্যায়ভাবে চা বাগান সম্প্রসারণের নামে জমি বরাদ্দ করে খাসিয়াদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন মানবাবিকার কর্মী খুশি কবীর।

বুধবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ঝিমাই পুঞ্জির খাসিয়া জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, কাপেং ফাউন্ডেশন, ইন্ডেজেনাস পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস (আইপিডিএস), কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন, গবেষণা ও উন্নয়ন কালেকটিভ (আরডিসি), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), নিজেরা করি ও এএলআরডি কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।

খুশি কবীর বলেন, ঝিমাই পুঞ্জিতে খাসিয়ারা ব্রিটিশ আমল থেকে বাস করছে। কিন্তু ভুল তথ্য ছড়িয়ে এবং অনিয়ম করে অন্যায়ভাবে চা বাগান সম্প্রসারণের নামে জমি বরাদ্দ করে খাসিয়াদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছে একদল অসাধু ব্যক্তি। এদের আগে ভূমি সুরক্ষা দিতে হবে। প্রয়োজনে চা বাগানের জমি বন্দোবস্ত বাতিল করতে হবে।

ভূমি বন্দোবস্ত প্রদানের সঙ্গে জড়িতদের পাশাপাশি খাসিয়াদের ওপর হামলাকারী, চলাফেরায় বাধা সৃষ্টিকারী, ধর্মীয় চর্চায় বাধাদানকারী এবং অধিকার হরণকারী ঝিমাই চা বাগান কর্তৃপক্ষের দ্বারা অপরাধ ও অধিকার লঙ্ঘনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বাপার সহ-সভাপতি মো.আব্দুল মতিন, ব্লাস্টের প্রাধান উপদেষ্টা বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, আরডিসির চেয়ারপারসন ড. মেসবাহ কামাল, শামসুল হুদা, পংকজ ভট্টাচার্য, ফাদার জোরসেফ প্রমুখ।

আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং লিখিত বক্তব্যে বলেন, কেদারপুর টি কোম্পানি লিমিটেড নানারকম অপচেষ্টার মাধ্যমে ঝিমাই পুঞ্জির খাসিয়াদের নানারকম অপচেষ্টার মাধ্যমে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছে। ২০১৫ সালে চা বাগানের ভেতর দিয়ে ঝিমাইপুঞ্জিতে ঢোকার প্রধান রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে গেইট তৈরি করেছে। এতে ৭২টি খাসিয়া পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে গেছে। এখন তাদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম ভীতি, গভীর হতাশা আর উচ্ছেদ আতঙ্ক।

সঞ্জীব দ্রং বলেন, ১৯৩৫ সালে জমিদারদের কাছ থেকে চুক্তির মাধ্যমে ৩৫০ একর জমি বন্দোবস্ত নিয়ে পান চাষ শুরু করেন খাসিয়ারা। পরে ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর অসচেতনতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ১৯৫৬ সালে ভূমি জরিপ করে তাদের নামে রেকর্ড নিতে পারেননি। অতীতের স্থানীয় সরকার ও জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন তারা। এমনকি খাসিয়াদের মধ্য থেকে দুই জন ইউপি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ এই সরকার চা বাগানের জন্য যে জমি লিজ প্রদান করেছে, তাতে তারা যে সেখানে বসবাস করেন, প্রায় শত বছরের পুরানো একটি জনবসতি সেখানে রয়েছে, তা অস্বীকার করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, খাসিয়ারা ওই জমিতে প্রায় ১০০ বছর ধরে দখলে আছে উল্লেখ করে ২০১১ সালে বন্দোবস্তের আবেদন করে। আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকার এবং প্রথাগত জীবনধারা ও অস্তিত্বের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে অজ্ঞাতসারে সরকার গত ২০১২ সালের ১৫ আগস্ট কেদারপুর টি কোম্পানির অনুকূলে ঝিমাই চা বাগানের জন্য ৬৬১.৫৫ একর ভূমির লিজ নবায়ন করে। লিজের মেয়াদ ২০৫২ সাল পর্যন্ত করা হয়। তাদের দাবি, ৬৮৬ একর জমি ঝিমাইয়ের জন্য দেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে ২০০ একরের বেশি জমি চা বাগান কর্তৃপক্ষ নিজের দখলে রেখেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৯
পিএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।