মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) এই ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে ‘অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট বিধিমালা-২০১৯’ প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করেছে পুলিশ সদরদপ্তর। ফলে আসামি গ্রেফতার, মামলার তদন্ত ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ ফলোআপ অভিযান চালাতে পারবে সংস্থাটি।
এতদিন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের অভিযোগে কাউকে গ্রেফতার করলেও মামলার তদন্ত করতে পারত না এটিইউ। আসামিকে গ্রেফতারের পর থানায় হস্তান্তর করতেন এটিইউ সদস্যরা। এরপর থানা পুলিশ বা অন্য সংস্থা মামলার তদন্ত করতো।
বিধিমালা অনুযায়ী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মতো গ্রেফতার, আটক, তল্লাশি ও জব্দসহ অন্যান্য ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন ইউনিটটির কর্মকর্তারা।
পুলিশ সদরদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় অবস্থানের ধারাবাহিকতায় ‘অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট বিধিমালা-২০১৯’ এর পুর্ণাঙ্গ বিধিমালা প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) ড. মুহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী এই বিধিমালা জারি করেন।
অ্যান্টি টেররিজমের বিধিমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশের আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ও গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক একটি স্বতন্ত্র ও স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে পরিচালিত হবে ইউনিটটি।
অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটকে সারাদেশে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত, আসামি গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদ, ব্যাবহৃত অস্ত্র/বিস্ফোরক উদ্ধার, জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদী প্রচারণা প্রতিরোধসহ এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বিভিন্ন সচেতনামূলক কর্মসূচি আয়োজনের কথাও বলা হয়েছে। বিধিতে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটকে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, ইউনিট প্রধান ও সদস্যদের সমন্বয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান পরিচালনার জন্য উপযুক্ত সাজ-সরঞ্জামসহ দক্ষ সোয়াত টিম, ক্রাইম সিন ইনভেস্টিগেশন টিম, বোম্ব বিস্ফোরণ ইনভেস্টিগেশন টিম, ক্রাইসিস ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম, এক্সপ্লোসিভ ডিসপোজাল টিম এবং কেনাইন স্কোয়াডসহ (ডগ স্কোয়াড) প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিশেষায়িত টিম ও স্কোয়াড গঠন করতে পারবে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অপরাধ এবং ওই অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলে, তা তদন্ত করতে পারবে। কোনো ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এ ইউনিটের কাছে ওই ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। থানায় মামলা হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওসি প্রাথমিক তথ্য ইউনিটকে অবহিত করবেন। মামলার তদন্তের পর আসামি গ্রেফতার করাসহ আইনানুগ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। ইউনিট কোনো মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করলে আইজিপির লিখিত অনুমোদন ছাড়া অন্য কোনো সংস্থায় ওই মামলা হস্তান্তর করতে পারবে না।
ইউনিটের সাব-ইন্সপেক্টর ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি, পুলিশি আইন অনুযায়ী থানার ওসিদের মতো গ্রেফতার, আটক, তল্লাশি, জব্দসহ অন্যান্য ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
অভিযান পরিচালনা, অনুসন্ধান ও মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে ইউনিটের চাহিদা অনুযায়ী জনবল, অস্ত্রশস্ত্র, অন্যান্য লজিস্টিকসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণে ইউনিটকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও দিতে হবে।
ইউনিটে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের দক্ষ ও চৌকস হিসেবে গড়ে তুলতে নিজস্ব গবেষণা ও প্রশিক্ষণ সেল গঠন এবং ডেটাবেজ সেন্টার স্থাপন করতে পারবে। এছাড়া লিগ্যাল সেল, সাধারণ ডায়েরি, পরিদর্শন বই সংরক্ষণ, রেকর্ডপত্র ও ডেটাবেজ সংরক্ষণ করতে পারবে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ পুলিশের কার্যক্রমকে অধিকতর বেগবান করার উদ্দেশ্য ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট নামে নতুন একটি পুলিশ ইউনিট গঠন করা হয়। কিন্তু এতদসংক্রান্তে কোনো বিধিমালা না থাকায় ইউনিটের কার্যক্রম পরিচালনায় নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছিল সংশ্লিষ্টদের। অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট বিধিমালা-২০১৯ এর গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ‘অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের’ প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি আরও মজবুত হবে এবং বাংলাদেশ পুলিশের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. আবুল কাশেম। এ ছাড়া এ ইউনিটের ডিআইজি দিদার আহমেদ, হারুন অর রশীদ, এডিশনাল ডিআইজি মনিরুজ্জামান। এছাড়া নয়জন পুলিশ সুপার দায়িত্ব পালন করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ এ ইউনিটের মোট জনবল হচ্ছে ৫৮১ জন।
বর্তমানে বারিধারায় সোহরাওয়ার্দী অ্যাভিনিউয়ে বহুতল বিশিষ্ট একটি ভাড়া বাড়িতে এই ইউনিটের সদর দফতরের কার্যক্রম চললেও নিজস্ব ভবনের জন্য ঢাকার পূর্বাচলে ১০ একর জমি বরাদ্দ করেছে সরকার। বিধি প্রণয়নের আগেই প্রাথমিকভাবে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট নিজেদের কার্যক্রম শুরু করে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৯
পিএম/টিএ