শনিবার (৩০ নভেম্বর) এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ আয়োজিত বিশেষ লেকচারে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল এ কথা বলেন।
এ দিন বিকেলে রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ অডিটোরিয়ামে ‘খাসিয়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন ও সংস্কৃতি: একটি বিশ্লেষণ’ শীর্ষক বিশেষ লেকচার সেশনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতিগোষ্ঠীগুলো ও তাদের লোকসংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করতে গিয়ে অধ্যাপক শাকিল বলেন, কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে মাস্টার্স ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে পিএইচডি ডিগ্রি করতে গিয়ে বুঝেছি, খাসিয়ারা রাষ্ট্রের কাছে তেমন কিছু প্রত্যাশা করে না। তারা শুধু নিজেদের মতো করে জীবনযাপন করতে চায়, নিজেদের পূর্ব পুরুষের ভূমির স্বীকৃতি চায়। যেখানে শত শত বছর ধরে বসবাস করছে, প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ভিত্তি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে, তারা চায় সেগুলোতে কেউ যেন ভাগ না বসায়, ধ্বংস না করে। কারণ পরিবেশগত বিপর্যয়, নির্বিচারে বন ধংস প্রাকৃতিক সম্পদ নির্ভর জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকায় বিরূপ প্রভাব ফেলে।
মূল প্রবন্ধে ড. শাকিল বলেন, প্রকৃতির সন্তান খাসিয়াদের প্রকৃতিকে ধারণ ও লালন করেই জীবন-জীবিকা ও বেচেঁ থাকা। পাহাড়, পর্বত, বন, গহীন জঙ্গলের ক্ষুদ্র একটি অংশকে বসবাস উপযোগী করে তাদের চলা। তবে হাজার বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে বসবাস করলেও এসব জনগোষ্ঠীর লোকজন নিজেদের বাসস্থানের মালিকানা লাভ করেনি এখনও।
শাবিপ্রবি অধ্যাপক বলেন, আধুনিক বিশ্ব জাতিগত বৈচিত্রকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে। জাতিগত বৈচিত্র নিয়ে গর্ব করে। আমরাও সবসময় একাত্তরের চেতনার কথা বলি; একাত্তরের চেতনার অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট কোনো জাতিগোষ্ঠীকে অবমাননা না করাও। খাসিয়া একটি সমৃদ্ধ জাতিসত্বার নাম। মাতৃসূত্রীয় এ জনগোষ্ঠীটি একদিকে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনা করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। অপরদিকে নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। অথচ নানা কারণে খাসিয়ারা আজ বাংলাদেশে অস্তিত্বের সংকটে।
‘তবে এখানে একটি তথ্য উল্লেখ করা প্রয়োজন। তা হলো- এসব জাতিসত্বার সংকট মানে বাংলাদেশের সংকট। বাংলাদেশের জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের সংকট। বর্তমানে বলা হয়ে থাকে, বৈচিত্রই শক্তি। তাই বাংলাদেশের জাতীয় শক্তি বাড়াতে হলে দেশের জাতিগোষ্ঠীগুলোকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পৃষ্ঠপোষকতা করা প্রয়োজন। ’
অনুষ্ঠানের শুরুতে ড. শাকিল ও তার একাডেমিক অর্জন সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সেক্রেটারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমদ।
আমন্ত্রিত বিশেষজ্ঞদের আলোচনার পর সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মাহফুজা খানমের সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
অনুষ্ঠানে আদিবাসী নেতাকর্মী, খাসিয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৯
টিএ