রোববার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ভোরের কাগজ পত্রিকা আয়োজিত ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি: প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি একথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটা বিশেষ সমস্যা আছে যে, আমরা আদিবাসীদের কি নামে অবিহিত করবো এটা ঠিক করতে পারি না।
বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তির মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের কৃষ্টি কালচারকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে নিবিড় বন্ধনে। এ অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে সরকার সবসময় সজাগ রয়েছে। তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মতো। একইসঙ্গে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সেখানে অনেকগুলো পক্ষ থাকায় সরকারের একার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয় এবং তা উচিতও নয়। তাই আমরা সবগুলো গোষ্ঠীকে একসঙ্গে নিয়েই এগোতে চাই। নানা সময়ে বিভিন্ন কারণে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হলেও তা থামবে না। আর সীমান্ত আরও সুরক্ষিত করতে পারলে অবৈধ অস্ত্রগুলোর আধিপত্য কমে যাবে।
বৈঠকে রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহিদুজ্জামান মহসীন (রোমান) বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর বিভিন্ন সময়ে রাঙামাটির অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন হয়েছে, যা পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আগের তুলনায় চাঁদাবাজিও অনেক কমে গেছে। তবে এখনো কিছু সমস্যা রয়ে গেছে।
এ এলাকার মানুষ হাতে গোনা কিছু অস্ত্রধারীদের কাছে জিম্মি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে পার্বত্য অঞ্চলে সব থেকে বড় ঝুঁকি নিরাপত্তা। প্রায় ৭০০ থেকে ১ হাজার অস্ত্রধারীদের কাছে এ অঞ্চলের মানুষ এখনো জিম্মি। এসব অস্ত্রধারীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে কাজের ব্যবস্থা করা গেলে তা উন্নয়নে ফলপ্রসূ হতো।
যারা এ চুক্তি করেছে, তারাও অনেকে এখন এ চুক্তির বাস্তবায়ন চায় না উল্লেখ করে শহিদুজ্জামান মহসীন বলেন, একটা সময় যারা পার্বত্য অঞ্চলে শান্তির জন্য এ চুক্তি করেছে বা এ চুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, তারা অনেকেই এখন চায় না এ চুক্তি বাস্তবায়ন হোক। কেননা এ চুক্তি বাস্তবায়ন হলে ক্ষমতাসীন অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এসময় তিনি রিজার্ভ ফরেস্ট উজাড় করে আবাসন না গড়া এবং বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য পার্বত্য অঞ্চলে কলকারখানা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল চৌধুরী বলেন, তৎকালীন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রায় সব সমস্যার সৃষ্টি হলেও এখনো সেই ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যার সমাধান হয়নি। নকল দলিল করে এখনো এ কার্যক্রম চলছে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের যুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে সময় এ চুক্তি সম্পন্ন হয়, তখন কোনো উপজেলা পরিষদ ছিল না। কিন্তু বর্তমানে পার্বত্য তিন জেলায় ২৬টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। এ পরিষদের চেয়ারম্যানরা সবসময় নিজ নিজ এলাকার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের এ চুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারলে এবং চুক্তিতে তাদের কার্যক্রম যুক্ত করা বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুদীপ্ত চাকমা, আসাদুজ্জামান সাত্তার, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হেমন্ত ত্রিপুরা প্রমুখ।
বৈঠক সঞ্চালনা করেন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৯
এইচএমএস/আরবি/