তিনি বলেন, এই ‘মুসানেড সিস্টেমে’ কর্মীদের বিস্তারিত ঠিকানা, সৌদি ও বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সি এবং নিয়োগকর্তার পূর্ণ যোগাযোগের ঠিকানা, নারীকর্মীদের নিয়োগকর্তা পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্যাদি, নারীকর্মীর আগমনের তারিখ ও নিয়োগকর্তার কাছে হস্তান্তরের তারিখ, প্রত্যাবর্তনকারী গৃহকর্মীর এক্সিট সংক্রান্ত তথ্যাদি সন্নিবেশিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও অন্যান্য তথ্যাদি হালনাগাদ করা হয়েছে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সম্প্রতি সৌদি আরব সফরে ৩য় জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির সভা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহা-পরিচালক শামসুল আলম, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব জাহিদুল হোসাইনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
সেলিম রেজা বলেন, বাংলাদেশিকর্মী নিয়োগের বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে একটি সাধারণ চুক্তি সইয়ের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ জানান এ বিষয়টি এখনো পরীক্ষাধীন রয়েছে ও আগামী জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির সভায় এটি নিয়ে আলোচনা হবে। এবার সৌদি আরবের কর্তৃপক্ষকে অনেক আন্তরিক মনে হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। আরও নেবে বলেও জানিয়েছেন। তারা বাংলাদেশিকর্মীর ওপর নির্যাতন করায় এক দম্পতিকে কারাগারে পাঠিয়েছে। কর্মীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনা হবে। যেমন, যেসব নারীকর্মী কর্মস্থল থেকে পলাতক পালিয়েছেন, পুলিশ তাদের নিয়োগকর্তার কাছে হস্তান্তর করবে না। নারীকর্মী যতদিন কর্মরত থাকবেন ততদিন তার দায় দায়িত্ব বাংলাদেশ ও সৌদি রিক্রুটিং এজেন্সি বহন করবে। যেসব নারীকর্মী প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় আছেন তারা প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত তাদের আবাসন ও অন্যান্য দায়িত্ব রিক্রুটিং এজেন্সি বহন করবে। নারীকর্মীরা কর্মকাল পূর্ণ করলে তাদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট এজেন্সি বহন করবে ও এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস ও সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে। যদি নারীকর্মী মেয়াদ শেষে কাজ করতে চান তাহলে অবশ্যই চুক্তি নবায়ন ও তা বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। চুক্তি নবায়নের পর সংশ্লিষ্ট এজেন্সি এ সংক্রান্ত তথ্যাদি মুসানেড এ আপলোড করবে।
ভিসা ট্রেডিং বন্ধের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, উভয়পক্ষ ভিসা বাণিজ্য বন্ধের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সৌদি কর্তৃপক্ষ এ ধরনের অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি আরোপ করা হবে মর্মে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে অবহিত করেছেন। ভিসা বাণিজ্য বন্ধের বিষয়ে উভয় দেশ একযোগে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছে। আমরা যৌথভাবে কাজ করবো। এ পর্যন্ত ভিসা ট্রেডিংসহ অন্যান্য অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকায় ১৬৪টি রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের অভিযোগ আমরা কেস টু কেস দেখা হবে। একইসঙ্গে এই চেইনের সঙ্গের যারা জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সৌদিতে কর্মীদের স্বাস্থ্যবিমা নিয়ে নতুন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশিকর্মীরা বিদ্যমান স্বাস্থ্যবিমা পর্যাপ্ত নয়। অসুস্থকর্মীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত পরিমানে স্বাস্থ্যবিমা করার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ কোম্পানি/ নিয়োগকর্তাদের বাধ্য করার উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছেন।
গৃহকর্মীদের ওপর নিয়োগকর্তাদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে মামলা করার কতটুকু সুযোগ সৌদি সরকার দেবে এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিম রেজা বলেন, সৌদি শ্রম আদালতে মামলা করার পদ্ধতি আরও সহজ করার বিষয়ে দু’পক্ষ একমত হয়েছে। এ বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোকে শিগগিরই অবহিত করবে। সব কর্মী যাতে চুক্তির কপি পেতে পারেন এলক্ষ্যে সৌদি কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করবে। ইতোমধ্যে সৌদিতে নির্যাতনকারী এক দম্পতিকে আটক করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে একটি সমস্যাও রয়েছে সেটা হলো আমাদের কর্মীরা মামলা বা অভিযোগ করে সেখানে থাকতে চায় না। ফলে তাদের অভিযোগটি আমলে নেওয়া হয় না। তারা অভিযোগ করেই দেশে চলে আসে। এছাড়া আমাদের দেশের কর্মীদের আকামা থাকা অবস্থায় চাকরি পরিবর্তনের কারণে অবৈধ হয়ে যাচ্ছে। এজন্য সেদেশের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে বলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে সারাবিশ্বে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ কর্মী রয়েছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রচ্যে রয়েছে প্রায় ৫ লাখ ২৩ হাজার ৪৭১জন নরী কর্মী। মধ্যপ্রচ্যের ১১টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারীকর্মী রয়েছে সৌদি আরবে। সেখানে বর্তমানে প্রায় দুই লাখ ৯৩ হাজার ৫৮৮ জন নারীকর্মী রয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন কারণে দেশে ফেরত এসেছে ৮ হাজার ৫০৭ জন। তারা সাধারণত থাকা ও খাওয়া সমস্যা, বাচ্চা রেখের যাওয়াসহ নানাভাবে শারীরিক নির্যাতনের কারণে দেশে ফেরত আসতে চায়। এছাড়া সৌদিতে বাংলাদেশের সেভহোমে রয়েছে ১৪৬ জন যারা দেশে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। আর সৌদি আরবের ডেকোরনেন্টারে রয়েছে ৪৬ জন। তবে সেভহোম থেকে আবার ৩৮০ জন নারীকর্মীর পুনরায় তাদের কর্মস্থলে ফিরে গেছেন। গত ১১ মাসে সৌদি আরব থেকে ১৯ জর নারীকর্মীর মরদেহ দেশে ফেরত এসেছে। তারা শারীরিক অসুস্থতাসহ নানা কারণে মৃত্যুবরণ করেছে।
গত ২৭ নভেম্বর রিয়াদে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সৌদি শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ৩য় জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৯
জিসিজি/এএটি