এছাড়া সড়কের বাসস্টপের ওপরও কখনো কখনো অবস্থান নেন তারা। এ কাজগুলো হয় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের সামনেই।
বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্রই।
ফার্মগেটে সকাল ৮টা থেকে হকাররা যার যার নির্ধারিত অবস্থান গ্রহণ করা শুরু করে। মেট্রোরেল স্থাপনের কাজ চলমান থাকার কারণে মূল সড়কসহ ফুটপাতের অনেকটা অংশ আটকানো রয়েছে। যে কারণে নগরবাসীর পায়ে হেঁটে চলার রাস্তা এমনিতেই সংকীর্ণ হয়ে রয়েছে। তার ওপর বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যসহ খাদ্যদ্রব্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। এক্ষেত্রে ফুটপাতে দাঁড়িয়েই তাদের কাছ থেকে এগুলো কিনছেন অনেকে। ফলে এ হাঁটার জায়গাটিতেও সবসময় মানুষের যানজট লেগেই থাকে।
ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজ সংলগ্ন মোড় থেকে আনন্দ সিনেমা হলের দিকে এগিয়ে যেতে সাধারণত এক মিনিটেরও কম সময় লাগার কথা হলেও লাগে প্রায় পাঁচ মিনিটেরও অধিক সময়। ওভারব্রিজ থেকে নেমে বা উঠতে সড়কের পাশের এই অংশে এটিই একমাত্র পথ। সেখানেই এমন দশা।
এদিকে আবার ফার্মগেট এলাকায় বহুল ব্যবহৃত ফুটপাতেও হাঁটার জায়গা আগের চেয়ে বেশি সংকীর্ণ। কেননা এখানে রয়েছে আরও আকর্ষণীয় বাজার। তবে বর্তমানে পুলিশের কঠোরতার চাপে হকাররা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে বসতে পারছে না বলেই জানা গেছে।
ফার্মগেট এলাকায় তেমনই একজন হাতঘড়ি ও মোবাইল অ্যাক্সেসরিজ বিক্রেতা সবুজ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, সকাল ৮টার দিকে এসে আমরা জায়গা দখল করি। এরপর দুঃচিন্তায় থাকি কখন পুলিশ এসে উঠিয়ে দেয়। দিনে ৩ থেকে ৪ বার তারা টহলে আসে। তখন আমরা আমাদের ঝুড়ি নিয়ে এদিক-ওদিক চলে যাই। পরে আবার আসি। তবে নিচে ফুটপাতে যারা বসে, তাদেরকে চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা নেয়।
গ্রিনরোডে অবস্থিত একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত রবিন নামে এক পথচারী বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তাতে তো জ্যাম থাকেই, এখন হেঁটে চলার পথেও জ্যাম শুরু হয়েছে। ফলে আমাদের ব্যাপক সময় অপচয় হয়। ফার্মগেট এলাকায় অনেক মানুষের ভিড়। হকার আগেও ছিল, কিন্তু তখন রাস্তা এতটা সংকীর্ণ ছিল না। এখন মেট্রোরেলের কাজ চলার কারণে ফুটপাত তো নেই, বরং হাঁটার একটি জায়গায় হকারদের অবস্থানের ফলে হাঁটাটাই দায় হয়ে দাঁড়ায়। ‘আগে যেখানে ১ মিনিট লাগতো, সেটা এখন ৫ থেকে ৭ মিনিট সময় লাগে। বিকেলে যখন অনেক চাপ থাকে, তখন আবার ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময়ও লেগে যায়। দিনে আমার ৬ থেকে ৮ বার এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়। এখানে আমার অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। ’
তবে শুধু ফার্মগেট এলাকায় নয়, হকারদের দৌরাত্ম্য রয়েছে রাজধানীর অন্যান্য এলাকাগুলোতেও।
এদিকে জনস্বার্থে হকার উচ্ছেদের কাজের দায়িত্বরত সংশ্লিষ্টরা আবার আছেন কাঁদা ছোড়াছুড়ি নিয়ে। এলাকাটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন হওয়ায় তাদের দায়িত্ব উচ্ছেদ করা। আবার এ দায়িত্ব রয়েছে পুলিশেরও। সিটি করপোরেশন বলছে, তারা নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে থাকে। এরপর জায়গাটি হকারমুক্ত রাখার দায়িত্ব পুলিশের। তারা শুধু অভিযানের মাধ্যমে জরিমানা করে উচ্ছেদ করে দিয়ে আসে। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, উচ্ছেদের কাজ তারাই করে থাকে। সিটি করপোরেশনের দেখাই পাওয়া যায় না।
শেষ কবে ফার্মগেট এলাকায় সিটি করপোরেশনের হকার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে তা না জানাতে পারলেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন অনিক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নিয়মমাফিক অভিযান পরিচালনা করি। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) কারওয়ান বাজার, বুধবার আগারগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়েছি। আগামী সপ্তাহে ফার্মগেটে ফলোআপ করতে যাবো। আমরা উচ্ছেদ করে দিয়ে আসি। এরপর হকারমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে পুলিশ। এখন হকার থাকলে সম্পূর্ণ দায় আমাদের নয়।
পুলিশ দিনে ৩ থেকে ৪ বার টহল দিয়ে থাকে এবং এখানে চাঁদাবাজির কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে তেজগাঁও মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম অর রশিদ তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, উচ্ছেদের কাজ একমাত্র আমাদের উপর না হলেও আমরা জনস্বার্থে কাজটা করি। আমাদের এমনিতেই ক্রাইম সেকশনের অনেক কাজ থাকে। তবুও আমাদের নিয়মিত টহলের সময় এ কাজ করা হয়। আর এখানে হকারদের ক্ষেত্রে আমাদের জিরো টলারেন্স।
‘তারা অবৈধ কোনো উপায়ে এখানে অবস্থান করবে সেই সুযোগ নেই। এমনিতে মূল সড়ক থেকে ভেতরে ফার্মগেটের যে ফলের দোকানগুলো আছে, সেগুলো তো ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায়। এই এলাকার কাউন্সিলর সেটার মালিক,’ যোগ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯
এমএএম/এসএ