ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা সড়কগুলো যেন মৃত্যুফাঁদ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৯
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা সড়কগুলো যেন মৃত্যুফাঁদ!

রাঙামাটি: পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির আঁকাবাঁকা সড়কগুলো এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত এ সড়কগুলোতে দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। আহত হচ্ছে অগণিত। যানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তবুও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের। দুর্ঘটনা রোধে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

স্বাধীনতার পর রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কিছুটা উন্নতি হলেও যে হারে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে চলেছে সে হারে সড়কে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এসব সড়কে ভয়ঙ্কর যেসব গিরিপথ রয়েছে সেসব পথ মাড়াতে প্রতিনিয়ত স্থানীয় চালকদের যেখানে হিমশিম খেতে হয় সেখানে বাইরে থেকে আসা চালকদের এসব গিরিপথে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকায় বেশি দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে।

সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা গেছে, রাঙামাটি সদরের প্রবেশ মুখ মানিকছড়ি থেকে ভেদভেদী এলাকার লোকনাথ মন্দির পর্যন্ত সড়কগুলোতে প্রতিদিন কোনো না দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এই এলাকার সড়কগুলো যেমন আঁকাবাঁকা তেমনি গিরিপথ। সড়ক বিভাগ মধ্যখানে এসব সড়কগুলোতে কিছু লুকিং গ্লাসের ব্যবস্থা করে দিলেও দুষ্টু লোকেরা তা ভেঙে দিয়েছে। এছাড়া ট্রাফিক সাইন এবং রোড মাকিং না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এ আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু সড়কগুলোতে চালকরা গতির তারতম্য না বুঝে ওভারটেকিং এবং দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়।

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা সড়ক।  ছবি: বাংলানিউজ

রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগ কর্তৃপক্ষ বাংলানিউজকে জানান, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বেশকিছু ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক (আঁকাবাকা পথ) চিহ্নিত করা হয়েছে। এই বাঁকগুলোর প্রধান সমস্যা হলো এর দু’পাশে পাহাড় থাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগতির যানবাহনগুলো দেখা যায় না। সড়কে নেই রোড সাইন এবং রোড মার্কিং। যে কারণে দুর্ঘটনা হচ্ছে বেশি।

সড়কগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করতে হলে পাহাড় কাটা জরুরি বলে মনে করেন তারা। পাহাড় কাটা গেলে রুটগুলোকে নিরাপদ সড়কে পরিণত করা যাবে। এজন্য তাদের কর্তৃপক্ষকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেজন্য এই প্রতিষ্ঠানে একজন দক্ষ এবং অভিজ্ঞ কর্মকর্তার প্রয়োজন বলে তারা মত ব্যক্ত করেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির কর্তারা আরও জানান, এসব রুটে দুর্ঘটনা কমাতে গত ১১ জুলাই ২০১৯ রাঙামাটি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রোড ডিজাইন অ্যান্ড সেফটি সার্কেল বিভাগকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। এরপরই একই বছরের গত ২৯ জুলাই রোড ডিজাইন অ্যান্ড সেফটি সার্কেল বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল স্থানীয় প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট কর্মককর্তাদের নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সড়কগুলো পরিদর্শন করেন এবং সুপারিশমালা প্রণয়ন করেন।

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা সড়ক।  ছবি: বাংলানিউজ

এদিকে সুপারিশমালা থেকে জানা গেছে, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দু’পাশে অবস্থিত পাহাড়গুলো কাটলে স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে এবং পাহাড় ধসের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। এজন্য পাহাড় না কেটে এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোতে বিআরটিএ এবং ট্রাফিক সাইন ম্যানুয়াল অনুযায়ী সাইন-সিম্বল ও রোড মার্কিং স্থাপন করতে হবে এবং স্থাপিত এসব সাইন-সিম্বল ও রোড মার্কিং সঠিক থাকতে হবে। না হলে রাতে দুর্ঘটনা বেড়ে যাবে বলে সুপারিশ মালায় উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে ‘লুকিং গ্লাস বা কনভেক্স মিরর স্থাপন করতে হবে। পাশাপাশি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোতে মাটি কেটে সমান করে (ফিলিং করে) রিটার্নিং ওয়াল করে দিতে হবে এবং সঠিক ড্রেনেজের ব্যবস্থা রাখতে হবে বলে জানানো হয়।

রাঙামাটি সড়ক বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু মুছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করছি, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেশকিছু ঝুঁকিপূর্ণ আঁকাবাঁকা সড়ক রয়েছে। এসব সড়কগুলোতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। এসব রুটে দুর্ঘটনা কমাতে রুটগুলোর তালিকা তৈরি করে প্রথমে সড়ক বিভাগের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলীকে একটি চিঠি পাঠানো হয় বলে জানান। এ চিঠির ভিত্তিতে তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী রোড ডিজাইন অ্যান্ড সেফটি সার্কেল বিভাগকে একটি চিঠি পাঠালে সেই টিঠির ভিত্তিতে ওই বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল ঝুঁকিপূণ সড়কগুলো পরিদর্শন করেন এবং ডিজিটাল সার্ভে করেন। এরপর সড়কগুলোতে দুর্ঘটনা এড়াতে একটি সুপারিশমালা প্রণয়ন করে গেছেন বলে জানান এ উপ-সহকারী প্রকৌশলী।

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা সড়ক।  ছবি: বাংলানিউজ

এতদিন কেন কাজগুলো শুরু করা যায়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে উপ-সহকারী প্রকৌশলী জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের প্রতিষ্ঠানটিতে প্রধান কর্মকর্তা পদটি শূন্য ছিল। একজন শুধু  অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতেন নামেমাত্র।

তিনি আরও বলেন, কাজ করার মতো আমাদের ফান্ড রয়েছে। নতুন কর্মকর্তাও বর্তমানে যোগদান করেছেন। এখন উদ্যোগী হলে কাজটা আমরা খুব দ্রুত শুরু করতে পারি।

এ ব্যাপারে জানতে প্রশ্ন করা হলে রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারহীন রুখসানা বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাপারটি আমি আপনার কাছ থেকে শুনলাম। খোঁজ নিয়ে দেখবো।  

রাঙামাটি নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যে হারে রাঙামাটিতে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে সে তুলনায় সড়কের উন্নয়ন চোখে পড়েনি।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কমিটির এ নেতা আরও বলেন, রাঙামাটি দিনদিন পর্যটন শহরে পরিণত হচ্ছে। জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বাড়ছে। জেলার বাইরে থেকে বড় আকারের পরিবহন রাঙামাটিতে প্রবেশ করছে। কিন্তু আমাদের রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে ভয়ঙ্কর যেসব আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথ রয়েছে সেগুলো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করে সমান সড়ক করার জোর দাবি জানান তিনি। এজন্য সড়ক বিভাগ যদি আন্তরিক হয় তাহলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব সড়কের বিপদজনক পদগুলো সংস্কার করা সম্ভব বলে যোগ করেন এ নেতা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।