ঢাকা, শনিবার, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৪৮ বছরেও নির্মাণ হয়নি পাকা সড়ক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯
৪৮ বছরেও নির্মাণ হয়নি পাকা সড়ক পাকা না হওয়া সড়ক। ছবি: বাংলানিউজ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে মুক্তিযোদ্ধারা যেসব মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম একটি ক্যাম্প মোল্লাটোলা ক্যাম্প। কিন্তু যুদ্ধ পরবর্তী এ এলাকাটির কথা কেউ মনে রাখেনি। গ্রামের রাস্তাটির সরকারি স্বীকৃতি (আইডি) না থাকায় গত ৪৮ বছরেও নির্মাণ হয়নি পাকা সড়ক। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদেরও রয়েছে ক্ষোভ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তঘেঁষা আজমতপুর মোল্লাটোলা গ্রাম, যেখানে ৫ হাজার লোকের বসবাস। এ গ্রামের আবুল খায়ের বিশ্বাসের বাড়িটি ছিল শাহবাজপুর ইউনিয়নের একমাত্র মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প।

৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে ৩ নম্বর সাব সেক্টরের সদর দফতর ছিল ভারতের মোহদীপুরে। ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ৫শ গজ দূরে ও মোহদীপুর থেকে ১ কিলোমিটার দূরে এ ক্যাম্পটি হওয়ায় এখান থেকেই মূলত শিবগঞ্জ উপজেলা মুক্ত করার মূল পরিকল্পনা ও যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়।  

বৃটিশ থেকে বর্তমান প্রতিটি নকশায় এ গ্রামের সংযোগ স্থাপনকারী একটি মাটির রাস্তা রেকর্ডে থাকলেও স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও ক্যাম্পটির সঙ্গে উপজেলার কোনো পাকা সংযোগ সড়ক নেই। এতে বর্ষাকালে ওই কাঁচা সড়কে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে। গ্রামটির পাশের প্রায় প্রতিটি রাস্তা পাকাকরণ হলেও আইডি না থাকার অজুহাতে আজও পাকা হয়নি এ রাস্তাটি। গ্রামের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো উচ্চ বিদ্যালয় নেই।  
 
এমনকি মোল্লাটোলা ডাকঘরটি এ গ্রাম থেকে সরিয়ে স্থাপন করা হয়েছে অন্য গ্রামে। ভারত থেকে বয়ে আসা পাগলা নদীর উপর ব্রিজ না থাকায় গ্রামবাসীকে ঘুরে অন্য গ্রামের উপর দিয়ে যেতে হয় উপজেলা সদরে।

এ ব্যাপারে গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ গ্রামের অবদান ছিল অনেক। তাদের গ্রামে ছিল মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প। এর পরও আজ অবধি গ্রামটিতে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। এতে তিনি হতাশ।

মুক্তি ক্যাম্প স্থাপনকারী আমানুল্লাহ বিশ্বাসের স্ত্রী শয্যাশায়ী তোমিমা বেগম জানান, তার স্বামী দেশ স্বাধীন করতে যুদ্ধ করার পাশাপাশি স্থাপন করেছিলেন মুক্তি ক্যাম্প। এ ক্যাম্পে ২০-৩০  জন মুক্তিযোদ্ধাকে তিনি নিজ হাতে রান্না করে খাইয়েছেন। সব মুক্তিযোদ্ধার থাকা-খাওয়া ছিল সম্পূর্ণ বিনে পয়সায়। অথচ তার বাড়িটির কথা কেউ মনে রাখেনি। নেই  মুক্তিযুদ্ধের কোনো স্মৃতিফলক।

মৃত মুক্তিযোদ্ধা আমানুল্লাহ বিশ্বাসের ছোট ভাই আব্দুল হান্নান ক্ষোভের সঙ্গে জানান, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার ক্ষমতায় রয়েছে অথচ তাদের গ্রামটি আজও অবহেলিত। তিনি তার ভাইয়ের নামে সরকারের কাছে একটি রাস্তা নির্মাণ ও নামকরণের অনুরোধ জানান।

এদিকে শিবগঞ্জ উপজেলায় প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম জানান, মুক্তিযুদ্ধ বিজরিত গ্রামটি ৪৮ বছর পার হলেও অবহেলিত রয়েছে। এ গ্রামে যুদ্ধ বিজরিত কোনো স্মৃতিচিহ্ন না থাকায় তিনি হতাশ। তাই তার ভাইয়ের বাড়িটি সংরক্ষণ ও একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

প্রতিবছরের মতো এ বছরও সোনামসজিদ চত্বরে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের কবরে এবং গণকবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এসময় বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের ভাগনে বিষয়টি জানার পর তার এক প্রতিক্রিয়ায় শাহবাজপুরের মোল্লাটোলা গ্রামটির উন্নয়নের দাবি জানান।

তবে শাহবাজপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধার সাবেক কমান্ডার মো. আব্দুল মান্নান ক্ষোভের সঙ্গে জানান, তার ইউনিয়নের যেসব চেয়ারম্যান এ পর্যন্ত নির্বাচিত হয়েছেন হয়ত তারা মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান করে না বলেই ওই গ্রামটির উন্নয়নের জন্য ভূমিকা রাখেননি।

অন্যদিকে শাহবাজপুরের মোল্লাটোলা ছাড়া সব গ্রামের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা মো. তোজাম্মেল হক রাস্তাটির আইডি না থাকাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেন।

নিজেদের ব্যর্থতা অস্বীকার করে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল জানান, গ্রামের রাস্তাটির আইডি তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। আইডি হলেই রাস্তাটি পাকাসহ মৃত মুক্তিযোদ্ধা আমানুল্লাহ বিশ্বাসের নামে নামকরণ করা হবে।

জানা যায়, শাহবাজপুর ইউনিয়নে মোল্লাটোলা ক্যাম্প ছাড়াও ঐতিহাসিক সোনামসজিদ প্রাঙ্গণে ৭ নম্বর সেক্টরের প্রথম সেক্টর কমান্ডার শহীদ নাজমুল হক টুলু ও সাব সেক্টর কমান্ডার বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের কবর এবং জেলার একমাত্র স্বীকৃত বধ্যভূমি অবস্থিত।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।