রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ভবনটি ভাঙতে গত বছর দরপত্র আহ্বান করা হয়, একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বও দেওয়া হয়। কিন্তু শর্ত জটিলতায় থমকে গেছে কার্যক্রম।
আইনি লড়াইয়ে হেরে গিয়ে ভবন থেকে বিজিএমইএ তাদের কার্যক্রম সরিয়ে নিয়েছে অনেকে আগেই। উত্তরার ১৭ নং সেক্টরে ১১০ কাঠা জমির ওপর তারা নতুন কার্যালয় গড়ে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী তা উদ্বোধন করেছেন গত বছরের ৩ এপ্রিল।
প্রথমে বলা হয়েছিল, দেশে প্রথমবারের মতো ডিনামাইট ব্যবহার করে ভবনটি ভাঙা হবে। কিন্তু পরিবেশের কথা বিবেচনা করে ডিনামাইট ব্যবহারের চিন্তা থেকে সরে আসে রাজউক। সিদ্ধান্ত হয় সনাতন পদ্ধতিতেই (শাবল-হাতুড়ি) ভবনটি ভাঙা হবে।
গত ১৬ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবন খালি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়। ওই দিনই ভবনের নিয়ন্ত্রণ বুঝে নিয়ে রাজউক কর্মকর্তারা মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
ভবন ভাঙার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। সর্বোচ্চ দরদাতা (১ কোটি ৭০ লাখ টাকা) হিসেবে সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্সকে চূড়ান্ত করা হয়। তবে শেষ মুহূর্তে সরে যায় প্রতিষ্ঠানটি।
পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা (১ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা) হিসেবে ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজকে চূড়ান্ত করা হয়। কথা ছিল, ভবনটিতে থাকা সব মালামাল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হবে।
কিন্তু ওই ভবনটি থেকে লিফট, এসিসহ অন্যান্য মালামাল সামগ্রী সরিয়ে নেয়ায় তৈরি হয় নতুন জটিলতা।
যেহেতু ভবনটিতে মূল্যবান সামগ্রী নেই এমন অজুহাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের দেওয়া দর কমানোর দাবি জানায় রাজউকের কাছে। রাজউক তাদের জানিয়ে দেয়, দর কমানো সম্ভব নয়, প্রয়োজনে পুনঃ দরপত্র আহ্বান করা হবে।
তবে রাজউক প্রতিষ্ঠানটির দাবি বিবেচনায় না আনলেও দরপত্রের কিছু শর্ত শিথিল করার কথা জানায়। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই চলে যায় ২০১৯, আসে নতুন বছর ২০২০। এ বছরেরও এক মাস চলে যাচ্ছে। কিন্তু ভবন ভাঙার কোনো তৎপরতা এখনও দেখা যায়নি।
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, সবকিছুই চূড়ান্ত অবস্থায় ছিলো। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজ তাদের দেয়া দর কমিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। আমরা তাদের এ বিষয়ে জানিয়েছি এটি এখন সম্ভব না। আমরা সবকিছু মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি, সিদ্ধান্ত এলে বলতে পারবো এটি ভাঙার বিষয়ে। এমনও হতে পারে ‘ভবন ভাঙতে নতুন করে আবার বিজ্ঞপ্তি দিতে হতে পারে।
১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর ভবনটির উদ্বোধন করেন ওই সময়কার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এরপর থেকে এটি তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানি কারক সমিতি- বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো।
তবে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন শুরুতেই অভিযোগ করে, মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে, উন্মুক্ত স্থান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ ভঙ্গ করে বিজিএমইএ ভবন তোলা হয়েছে। এমন খবর গণমাধ্যমে এলে ২০১০ সালের ৩ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল দেয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বিজিএমইএকে নিজস্ব অর্থায়নে ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে বলা হয়। এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৯ ঘন্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২০
ইএআর/এজে