নাজমুলের দাবি, গরিব হওয়ার কারণে ম্যাডাম (সারোয়ার আলীর স্ত্রী) তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেননি। যে কারণে পরিকল্পিতভাবে গত ৫ জানুয়ারি রাতে উত্তরায় সারোয়ার আলী ও তার মেয়ের বাসায় হামলা চালায় তারা।
সারোয়ার আলীর বাসায় হামলার ঘটনায় নাজমুলসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গ্রেফতার বাকি চারজন হলেন- শেখ রনি (২৫), মো. মনির হোসেন (২০), মো. ফয়সাল কবির (২৬) ও মো. ফরহাদ (১৮)।
এদের মধ্যে ফরহাদকে ১২ জানুয়ারি গ্রেফতার করা হয়। বাকিদের ২২ জানুয়ারি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ঘটনায় জড়িত আল আমিন মল্লিক ও নূর মোহাম্মদ নামে দু’জন এখনো পলাতক।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিআইবি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।
তিনি বলেন, নাজমুল হিন্দি সিনেমার ভক্ত। তিনি ভাবতেন, গরিব হওয়া তার অপরাধ না। গরিব হওয়ার কারণে ম্যাডামের সঠিক ব্যবহার পাচ্ছেন না। এ কারণে চাকরি ছেড়ে দেন এবং মনে মনে পরিকল্পনা করেন। কারণ এর একটি প্রতিবাদ হওয়া দরকার।
সেই কাল্পনিক ধারণায় প্রভাবিত হয়ে ডা. সারোয়ার আলীর পরিবারকে উচিত শিক্ষা দেওয়া ও ভয় দেখিয়ে ডাকাতির পরিকল্পনা করেন নাজমুল। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে চাচাতো ভাই রনি, ভগ্নিপতি আল-আমিন, নুর মোহাম্মদ ও ফয়সালকে ডাকাতির কাজে নিয়োগ করেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নাজমুল রাজধানীর আজমপুর লেবার মার্কেট থেকে মনির ও ফরহাদকে দৈনিক ৫শ টাকা ভিত্তিতে ডাকাতির কাজে নিয়োগ দেন।
গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, কেউ যেন চিনতে না পারে সেজন্য নাজমুল তিন মাস ধরে দাড়ি-গোঁফ না কেটে বড় করেন। ৫ জানুয়ারি বিকেলে আশকোনা এলাকার হোটেল রোজ ভ্যালির ৩০৩ নম্বর কক্ষে ৭ ডাকাতের সঙ্গে চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেন নাজমুল। বাসার পরিবেশ, কক্ষ, পার্কিং প্লেস সম্পর্কে সবাইকে অবগত করেন এবং ডাকাতির সময় কার কী ভূমিকা হবে তা বুঝিয়ে দেন। সারোয়ার আলীর বাড়িতে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটের অংশ হিসেবে ডাকাতির পরিকল্পনা হলেও ক্ষোভের বিষয়টি গোপন করে নাজমুল। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় হোটেল থেকে নাজমুল প্রথমে একা বেরিয়ে যান।
নাজমুল একটি ব্যাগে করে ৭টি চাপাতি ও ৫টি সুইচ গিয়ার ছুরি নিয়ে ঘটনাস্থল এলাকায় এসে রনির হাতে দেন। রনি ঘটনাস্থলে থাকা ৫ আসামিকে ছুরিগুলো বিতরণ করেন। নাজমুল রাত ৯টায় পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে দারোয়ান হাসানকে দেন এবং কৌশলে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। পরে চাপাতিসহ ব্যাগটি গ্যারেজের পাশে রেখে দেন।
নাজমুল ও ফয়সাল দ্বিতীয় তলায় তাদের সেন্ডেল খুলে রেখে তৃতীয় তলায় যান। তৃতীয় তলায় সারোয়ার আলীর মেয়ে সায়মা আলীর বাসায় নক করেন। তার মেয়ে দরজা খুললে নাজমুল ও ফয়সাল ধাক্কা দিয়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে সায়মা আলী, তার স্বামী হুমায়ুন কবির ও মেয়ে অহনা কবিরদের ছুরির ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে রাখেন।
পরে ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে ফয়সালকে তৃতীয় তলার নিয়ন্ত্রণ রেখে নাজমুল চতুর্থ তলায় সারোয়ার আলীর ফ্ল্যাটে এসে নক করেন। দরজা খুলে দিতেই জোরপূর্বক ভিতরে প্রবেশ করে তাকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে মেঝেতে ফেলে গলায় ছুরি ধরেন এবং এই সময়ে তার স্ত্রী মাখদুমা নার্গিস চিৎকার শুরু করলে নাজমুল বাইরে অপেক্ষারত সহযোগীদের ফোনে ভেতরে আসতে বলেন।
তাদের অনবরত চিৎকার শুনে দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া মেজর (অব.) সাহাবুদ্দিন চাকলাদার ও তার ছেলে মোবাশ্বের চাকলাদার ওরফে সজিব চতুর্থ তলায় আসেন। দারোয়ান ঘুমিয়ে না পড়ায় নাজমুলের বাইরে অবস্থানরত সহযোগীরা ফোন পেয়েও ভেতরে ঢুকতে পারেননি। ফলে নাজমুল হতাশ হয়ে ভয় পেয়ে দ্রুত পালিয়ে যান।
বাংলদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২০
পিএম/এএ