ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মাসেতুর মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে ফার্ম নিয়োগ

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২০
পদ্মাসেতুর মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে ফার্ম নিয়োগ

ঢাকা: পদ্মাসেতু প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় কেন বারবার বাড়ানো হয়েছে তা খুঁজতে ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আগামী চার মাসে সেতুর সব ধরনের মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করবে তারা। এজন্য খরচ হবে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। 

জানা গেছে, পদ্মাসেতু প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বার বার বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে চলমান নিবিড় পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে চায় সরকার। কী কারণে সেতুর মেয়াদ-ব্যয় বৃদ্ধি হলো এই বিষয়ে নানা কারণও খুঁজে বের করা হবে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত চার মাসে এই মূল্যায়ন করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন অর্থায়নে বিলম্ব, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিলম্ব, ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা ও প্রকল্পের বার বার মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণসহ অন্যান্য দিক বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করা হবে।

পদ্মা বহুমুখী মূল সেতুর ৮৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় জাজিরা প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ-৯১%, মাওয়া প্রান্তে এপ্রোচ রোডের কাজ-১০০%, সার্ভিস এরিয়া (২)-১০০%, মূল সেতু নির্মাণ কাজ ৮৫.৫০% এবং নদীশাসনের কাজ ৬৬% শেষ হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৬.৫০%।

সংশোধিত পদ্মাসেতু প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত চারবার সময় বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের। এবার একধাপে সময় বাড়ছে দেড় বছর। অর্থাৎ নতুন নির্ধারিত সময় অনুযায়ী প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে ২০২১ সালের জুন মাসে। আগে ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর সম্পন্ন হওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। জুন ২০২১ সালের মধ্যেই প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে হবে। প্রথমে ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। এরপরে সময় বেড়ে দাঁড়ায় ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আবারও ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পযর্ন্ত সময় বাড়ানো হয়। সবশেষ ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির সময় বাড়ানো হচ্ছে। ২০০৭ সালে একনেকে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়। ২০১১ সালে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি হয়ে যায়। ২০১৮ সালে বাড়তি যুক্ত হয় আরও ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

পদ্মাসেতু বাস্তবায়নে ত্রুটি-বিচ্যুতি ও সফলতাসেহ সেতুর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল বিষয়ে মূল্যায়ন করা হবে। এই জন্য বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালটেন্টস লিমিটেড এবং আইআরজি ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস লিমিটেড নামক দুটি ফার্ম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চার মাসে সেতুর সকল মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করতে ফার্ম দুটিকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিবিড় পরিবীক্ষণ কার্যক্রমের জন্য প্রকল্পের পটভূমি উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে প্রাপ্ত ধারনার ভিত্তিতে কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
 
পদ্মাসেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্পের কাজটির সঙ্গে একাধিক দেশি-বিদেশি সংস্থা, এজেন্ট ও প্রতিষ্ঠান জড়িত। বিধায় তথ্য দলিলাদি প্রাপ্তির জন্য অনেকের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে, যা সময় সাপেক্ষ। কিন্তু সরকার দ্রুত সেতু শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা সার্বিক চিত্র পেতে চায়। এই জন্যই দুটি ফার্ম নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানায় সরকারের একমাত্র প্রকল্প তদারকি সংস্থা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি)।
 
আইএমইডি সূত্র জানায়, বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) নগরীরর শেরে বাংলানগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডিতে ফার্ম নিয়োগের বিষয়ে একটা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

আইএমইডির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মাসেতুর বিষয়ে একটা মিটিং হয়েছে সব কাজ মনিটরিং করার জন্য। ফার্মের মাধ্যমে মনিটারিং করা হবে। ফার্ম দুটি সব সময় সেতু এলাকায় থেকে চার মাসের মধ্যে একটা প্রতিবেদন জমা দেবে। পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল চিত্র উঠে আসবে। পদ্মাসেতু বাস্তবায়নে কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি ও সফলতার সকল বিষয় উঠে আসবে। আমরা দেশবাসী কী ধরণের সুফল পাবো পদ্মাসেতু থেকে এসব বিষয়ও জানতে পারবো। প্রকল্পের ব্যয়-সময় বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে জানতে পারবো। ’

আইএমইডি সূত্র জানায়, নানা উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পদ্মাসেতু প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষণ করা হবে। প্রকল্পের পটভূমি উদ্দেশ্য, অনুমোদন, সংশোধনের অবস্থা, অর্থায়নের বিষয় ইত্যাদি তুলে ধরা হবে। প্রকল্পের সার্বিক, বাস্তব ও আর্থিক বিষয় উঠে আসবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য অর্জনের অবস্থা পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ প্রকল্পের আওতায় চলমান বিভিন্ন পণ্য, কার্য, সেবা প্রচলিত আইন ও বিধিমালা মোতাবেক হচ্ছে কি না তুলে ধরা হবে।
 
প্রকল্প পরিচালকের প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ বিভিন্ন সভা আহ্বান ও গৃহিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তৎপরতা, প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কর্মকাল ইত্যাদি তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করা হবে। প্রকল্প অনুমোদন, সংশোধন, অর্থ ছাড়, বিল পরিশোধ ইত্যাদি তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করা হবে। প্রকল্প সমাপ্তির পর বিভিন্ন সুবিধাদি টেকসই করার লক্ষ্যে মতামত দেওয়াও হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২০
এমআইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।