ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যশোরে গাইনি চিকিৎসক-অ্যানেসথেসিয়ার অভাবে প্রসূতিসেবা বন্ধ

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০
যশোরে গাইনি চিকিৎসক-অ্যানেসথেসিয়ার অভাবে প্রসূতিসেবা বন্ধ

যশোর: যশোরের তিনটি উপজেলায় চিকিৎসক ও অ্যানেসথেসিয়ার (চেতনা নাশক) অভাবে বছরের পর বছর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার ও প্রসূতিসেবা বন্ধ রয়েছে। এতে ভুক্তভোগী শার্শা, মণিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার প্রসূতি মায়েদের জরুরি মুহূর্তে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের জন্য স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিক কিংবা যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। এতে দুর্ভোগের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এই অঞ্চলের মানুষ।

যশোর জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ২৬ জন চিকিৎসকের জায়গায় বর্তমানে কর্মরত মাত্র ৮ জন। অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৯টি পদের মধ্যে চিকিৎসক আছেন ১১ জন।

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২২টি পদের ১৬টি পদ শূন্য। এসব উপজেলাতে গাইনি চিকিৎসক ও অ্যানেসথেসিয়ার অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৫ সালে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কর্মজীবন শেষ করেন গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. হানিফা বেগম। এরপর থেকে এখানে নতুন করে কোনো গাইনি চিকিৎসক আসেননি। আর তিন বছর আগে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বদলি হয়ে চলে আসেন গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. রেবেকা সুলতানা। এরপর একযুগের বেশি সময় ধরে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। ফলে উল্লিখিত তিনটি উপজেলার মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে প্রসূতিসেবা পাচ্ছেন না। প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে রোগী গেলেই জরুরি বিভাগ থেকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে কথা হয় মণিরামপুর উপজেলার রোহিতার গ্রামের সালেহা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চিকিৎসার জন্য গভীর রাতে গৃহবধূ রুমিকে নিয়ে ছুটতে হয় যশোরে। পরের দিন সকালে রোগীর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। কিন্তু মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলে এ দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।

একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অভয়নগরের খাইরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে হঠাৎ তার স্ত্রী সালমার প্রসব বেদনা উঠলে দ্রুত তাকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। কিন্তু এখানে গাইনি চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করে দেন। সরকারের উচিত দ্রুত উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, গাইনি চিকিৎসক ও অ্যানেসথেসিয়ার অভাবে যশোরের শার্শা, মণিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবগত করা হয়েছে। গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসকের জন্য পত্র পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি। যে কারণে হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছেন। আপাতত সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার সচল করার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০
ইউজি/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।