এসব অগ্নিকাণ্ডের কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, অসতর্কতাই ছিল প্রধান কারণ। ফলে কখনো বৈদ্যুতিক গোলযোগ, চুলা, সিগারেটের আগুন কিংবা অন্য কোনো কারণে আগুন লেগেছে।
প্রতি বছরের অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়কে ‘বার্নিং সিজন’ বলা হয়। এর মধ্যে আবার মার্চ-এপ্রিল মাসে বেশি আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে বিধায় এ সময়কে আলাদা করে বেশি গুরুত্ব দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। গত তিন বছরে বরিশাল বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মূলত তিনটি কারণে এ অঞ্চলে আগুন লাগে। এর মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক গোলযোগ, গ্যাসসহ বিভিন্ন চুলা ও সিগারেটের অগ্নিকণা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, বিগত তিন বছরের হিসাবে পর্যায়ক্রমে অগ্নিকাণ্ডের সূচক ঊর্ধ্বমুখী। তিন বছরে সংঘটিত ২৪৮৫টি দুর্ঘটনার মধ্যে শর্টসার্কিটের কারণে ১০৩৬টি, গ্যাসসহ বিভিন্ন চুলার কারণে ৫৯৪টি এবং সিগারেটের অগ্নিকণার কারণে ৩৩৩টি দুর্ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় (বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি) মোট ৭৮৯টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ওই বছর যথারীতি বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে বেশি দুর্ঘটনা হয়, যার সংখ্যা ছিল ২৯৬টি। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা গ্যাসসহ বিভিন্ন চুলার কারণে ১৯৬টি এবং সিগারেটের অগ্নিকণার সূত্রে ১৩০টি দুর্ঘটনা হয়।
এর বাইরে ২০১৭ সালে শত্রুতা করে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে তিনটি। এছাড়া, খোলাবাতি, ছোটদের আগুন নিয়ে খেলা থেকে, রাসায়নিক, স্থিরবিদ্যুৎ, মিস ফায়ার, শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বাকি ১৬৪টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এর মধ্যে খোলাবাতি ব্যবহারের কারণে সর্বোচ্চ ৪২টি, অজ্ঞাত কারণে ৪১টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সব মিলিয়ে ওই বছর মোট ক্ষতি হয়েছে ২৮ কোটি ৯১ লাখ ৩ হাজার ৩৮৫ টাকার সম্পদ। আর উদ্ধার হয়েছে ৭১ কোটি ৫১ হাজার ২৮৫ টাকার সম্পদ।
এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে আগুন লাগার ঘটনা একটু কমে আসে। যেখানে ২০১৭ সালের চেয়ে ২০১৮ সালে ১৮৩টি দুর্ঘটনার পরিমাণ কমে ৬০৬টিতে দাঁড়ায়। এর মধ্যে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে হয় ২৭৮টি। গ্যাসসহ বিভিন্ন চুলার কারণে ১৬৫টি, সিগারেটের অগ্নিকণার কারণে ৩৪টি, খোলবাতির কারণে ৩২টি ও অজ্ঞাত কারণে ৫৩টি ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। বাকি ৪৪টি ঘটনা অন্য কারণে হয়েছে। সব মিলিয়ে ওই বছর মোট ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি ৮১ লাখ ৫ হাজার ৩৫ টাকার সম্পদ। আর উদ্ধার হয়েছে ১২৬ কোটি ৯৪ লাখ ৩০ হাজার ৬২৫ টাকার সম্পদ।
তবে পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে পুরনো রেকর্ড ভেঙে মারাত্মক আকার ধারণ করে আগুন লাগার সংখ্যা। ওই বছর বিভাগে ১০৯০টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে শর্টসার্কিটের কারণে সবচেয়ে বেশি ঘটলেও পাল্লা দিয়ে বাড়ে গ্যাস বা চুল্লি ও সিগারেটের অগ্নিকণায় আগুন লাগার সংখ্যা।
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের ১০৯০টি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে ৪৬২টি সংঘটিত হয়েছে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে। এছাড়া, গ্যাসসহ বিভিন্ন চুলার কারণে ২৩৩টি, সিগারেটের ফেলে দেওয়া অংশের কারণে ১৬৯টি, খোলাবাতির কারণে ৪৮টি ও অজ্ঞাত কারণে ৮৪টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এর বাইরে অন্য কারণে ৮৪টি দুর্ঘটনা ঘটে। ওই বছরই তিনবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে বরিশাল বিভাগে। সব মিলিয়ে ওই বছর মোট ক্ষতির পরিমান ১৪ কোটি ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ১০০ টাকার সম্পদ। আর উদ্ধার হয়েছে ৮৮ কোটি ৮৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকার সম্পদ।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বরিশাল সদর স্টেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাইফুজ্জামান বলেন, প্রতি বছর দক্ষ মিস্ত্রি দিয়ে ঘরের বৈদ্যুতিক ক্যাবল, সুইচগুলো যাচাই করে দেখা, গ্যাসের চুলার পাইপ ও রেগুলেটর প্রতিনিয়ত চেক করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন করে লাগানো নিরাপত্তার জন্য ভালো। কিন্তু তা কখনোই করা হয় না, ফলে খেসারতও বেশি দিতে হয়।
বরিশাল বিভাগের ৪২টি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৩৮টি স্টেশন রয়েছে। তার মধ্যে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত স্টেশন মাত্র তিনটি, ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত ২৩টি এবং ‘সি’ শ্রেণিভুক্ত ১০টি। অপরদিকে বরিশালের মুলাদী ও বরগুনার তালতলীতে স্টেশন নির্মাণের কাজ চললেও আগৈলঝাড়া ও পটুয়াখালী জেলার রাঙাবালী উপজেলায় স্টেশন নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১১ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২০
এমএস/এফএম