সোমবার (৯ মার্চ) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হামিদুল হক।
পদ্মায় নৌকাডুবির ঘটনার কারণ উল্লেখ করে রাজশাহী জেলা প্রশাসক বলেন, মাছ ধরার ইঞ্জিনচালিত ডিঙ্গি নৌকায় ধারণক্ষমতা ৮-১০ জনের অতিরিক্ত ২০-২২ জন যাত্রী নেওয়া ও নদীর হঠাৎ তীব্র স্রোত এবং বিপরীতমুখী ঝ'ড়ো বাতাসের কারণে এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ওই দুর্ঘটনার সময় দুটি নৌকায় বর ও নববধূসহ মোট ৪২ যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসনের সার্বিক সমন্বয় ও পরিচালনায় মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, নৌ-পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বিজিবি, বিডব্লিউটিএ ও স্থানীয় জেলেদের একটি দল পদ্মা নদীতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে।
শুক্রবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে সোমবার (৯ মার্চ) সকাল পর্যন্ত ৬২ ঘণ্টার উদ্ধার অভিযানে বরসহ ৩৩ জনকে জীবিত ও এক শিশুসহ ৯ জনের মৃত উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, পদ্মার চরে গিয়ে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান শেষে অসচেতনভাবে সবাই নৌকায় ওঠেন।
উদ্ধারদের মধ্যে ৫ জনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ৪ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অবশিষ্ট একজন, নিহত নববধূ সুইটির বাবা মো. শাহীন আলী (৪৮) বর্তমানে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
এদিকে নিখোঁজ আরও ৯ জনকে উদ্ধারে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বিজিবি ও স্থানীয় জেলের সঙ্গে সর্বশেষ যুক্ত হয় বিআইডব্লিউটিএ'র ডুবুরিদল। সোমবার সকালে নিখোঁজ নববধূ সর্বশেষ সুইটি খাতুন পূর্ণিমার (১৫) মরদেহ উদ্ধার হয়।
নিহতদের মরদেহ উদ্ধারের পর এরই মাঝে শনাক্তকরণ ও সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেকের দাফনের জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা করে অনুদানও দেওয়া হয়। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ মরদেহগুলো স্ব-স্ব ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ওই দুর্ঘটনার পর কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যেই কমিটি তদন্ত কাজ শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এখন তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, আগামীতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকরী বিভিন্ন পদক্ষেপও নেওয়া হবে। আগামীতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এখন থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও তদারকি করা হবে বলেও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সে জন্য মাছ ধরার নৌকা, যাত্রীবাহী নৌকা ও প্রমোদতরি আলাদা আলাদাভাবে চিহ্নিত করা, নৌকার মাঝির বয়স নির্ধারণ, ও প্রতিটি নৌকায় যাত্রীর ধারণ ক্ষমতা লিখে দেওয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলাম, বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস জিয়া উদ্দিন মাহমুদ, রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) বোয়ালিয়া জোনের উপ-কমিশনার সাজিদ হোসেন, রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ইফতে খায়ের আলম, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক (ডিডি) আবদুর রশিদ, রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল হক উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২০
এসএস/এইচজে