ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খুলনায় যেখানে বাদুড়ের রাজত্ব!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২০
খুলনায় যেখানে বাদুড়ের রাজত্ব! ডালে ডালে পাতার ফাঁকে উল্টো হয়ে ঝুলে আছে শত শত বাদুড়। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: এক সারিতে ভীষণ লম্বা বেশ কয়েকটি দেবদারু গাছ। গাছগুলোর ডালে ডালে পাতার ফাঁকে উল্টো হয়ে ঝুলে আছে শত শত বাদুড়। দেখলে মনে হবে এ যেন বাদুড়ের রাজত্ব। বাংলাদেশ ব্যাংকের খুলনা কার্যালয়ের গাছগুলোতে এমন দৃশ্য প্রতিদিনের। নিশাচর এ প্রাণীটি সন্ধ্যা হলেই এখান থেকে দলবেঁধে বের হয়ে যায় খাবার সংগ্রহে। শুধু দেবদারু নয় ব্যাংক ভবনের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের নানা ধরনের লম্বা গাছে হাজারও বাদুড় দিনের বেলায় টান টান হয়ে ঝুলে থাকে। এমন দৃশ্য পথচারীদেরও নজর কাড়ে।

এ কার্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান ওহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘দিনের বেলায় ব্যাংক ভবনের তিন পাশের গাছগুলোতে বাদুড় ঝুলে থাকে। সন্ধ্যায় দলবেঁধে বের হয়ে যায় খাবার সংগ্রহে।

ব্যাংক সীমানার মধ্যে হওয়ায় কেউ বাদুড়দের বিরক্ত করে না। নিরাপত্তা পায় বলে ওরা এখানে থাকে। ’

তিনি জানান, দীর্ঘ আট বছর যাবত দেখে আসছেন এখানে বাদুড়ের রাজত্ব। তবে আগের চেয়ে এখন বাদুড় কিছুটা কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশের আপার যশোর রোডের ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের দক্ষিণ পাশের দেবদারুসহ বেশ কিছু গাছে অনেক বছর ধরে দিনের বেলায় হাজার হাজার বাদুড় দেখে আসছি। সন্ধ্যার আগে বাদুড়গুলো যখন আহার সংগ্রহের জন্য উড়তে শুরু করে তখন আকাশ ছেয়ে যায়। দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। ব্যাংকের গাছগুলোতে কোনো পথচারী বিরক্ত করে না। যার কারণে এ স্থানকে অভয়ারণ্য মনে করে বাদুড়রা। ’ডালে ডালে পাতার ফাঁকে উল্টো হয়ে ঝুলে আছে শত শত বাদুড়।  ছবি: বাংলানিউজতারা জানান, বাদুড় সাধারণত থাকার স্থান পরিবর্তন করে না। তবে মানুষ যদি অত্যাচার শুরু করে তাহলে ওরা বাধ্য হয়ে অন্যত্র চলে যায়।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মদিনুল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, ডানা বিশিষ্ট উড়তে সক্ষম একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী বাদুড়। খুলনা ও যশোর অঞ্চলে ১২ প্রজাতির বাদুড় রয়েছে।

জানা যায়, বাদুড় কোনো পাখি নয়। বাংলাদেশে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের এক-চতুর্থাংশ বাদুড় রয়েছে। বাদুড়ের বৈজ্ঞানিক নাম: Pteropus giganteus। বাংলাদেশে প্রায় ১১৩ প্রজাতির বাদুড় রয়েছে। সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে তারা খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। তখন শব্দেন্দ্রিয় ব্যবহার করে তারা একে অন্যকে গাইড করে। অনেক দূরে খাবারের খোঁজে পৌঁছে যায়। পৃথিবীতে ১১০০ প্রজাতির বাদুড় রয়েছে। কোনো প্রজাতির বাদুড়ই দিনের আলো পছন্দ করে না।

রাতে তারা স্বাধীন ভাবে উড়ে বেড়ায়। কারণ তারা নিশাচর প্রাণী। সবচেয়ে বড় বাদুড়ের পাখার দৈর্ঘ্য আট ফুট। ভারতে এ বাদুড়ের বিচরণ অনেক বেশি দেখা যায়। বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা বাদুড় চোখে দেখে না। এরা চলার সময় শব্দোত্তর তরঙ্গ সৃষ্টি করে এবং সেই শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসলে সে অনুযায়ী পথ চলে। এমনকি তারা শিকারও করে এভাবেই।

তবে সত্যি কথা হচ্ছে, এ বিষয়টি শুধু খুব ছোট বাদুড়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে তাদেরও দৃষ্টিক্ষমতা রয়েছে, যদিও সেটি খুবই ক্ষীণ। কিন্তু বড় আকৃতির বাদুড় চোখে দেখে এবং বেশ ভালোভাবেই দেখে। এমনকি তারা চোখে দেখে এবং গন্ধ শুঁকে ফলমূল সংগ্রহ করে খায়। বাদুড়ের খাদ্য ফল ও ফলের রস, পতঙ্গ, মাকড়সা, মাছ, ব্যাঙ, ছোট সরীসৃপ ও পাখি।

অনেকেরই ধারণা প্রাণী হিসেবে বাদুড় প্রকৃতিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না। কিন্তু কথাটা একদমই সত্যি নয়। মাঝেমধ্যে ফলফলাদির ক্ষতি করলেও বাদুড় বুনো গাছপালার পরাগায়ণ, বীজ-বিস্তরণ ও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কলাবাদুড়রা নরম ও মাংসল ফলের বৃক্ষের অনেকগুলো প্রজাতির সুদক্ষ বংশবর্ধক। কিছু আদিবাসী সমাজে কলাবাদুড় ভক্ষণের রেওয়াজ আছে। কোনো কোনো প্রজাতি জলাতঙ্কের ভাইরাসবাহী হলেও নিজে তাতে আক্রান্ত হয় না। তাই বাদুড় কামড়ালে জলাতঙ্করোধী টিকা নেওয়া আবশ্যক।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২০
এমআরএম/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।