ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জাল-জালিয়াতিই পেশা নাসিরের!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২০
জাল-জালিয়াতিই পেশা নাসিরের!

হবিগঞ্জ: বহু অপকর্মের হোতা নাসির মিয়া (৫৫)। দলিল জালিয়াতি থেকে শুরু করে ভূমি দখল, রেকর্ড জালিয়াতি, ভুয়া নামজারি করে রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা করে দেওয়া- এমন অসংখ্য অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এমনকি জাল দলিল চক্রের সক্রিয় সদস্যও তিনি।

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের কামালপুর (নয়াবাড়ি) গ্রামে তার বাড়ি। তবে এলাকায় মানুষ তাকে ভূমির দালাল হিসেবেই বেশি চেনে।

এমনকি তাকে ‘ভূমিদস্যু নাসির’ও বলে ডাকে অনেকে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিদিন তার একটাই কাজ, ভূমি অফিসে যাওয়া, দালালি করা। আর নিরীহ মানুষের দুর্বলতার সুযোগে হয়রানি করা। তিনি জাল দলিলের মাধ্যমে অন্যের ভূমি দখল করে চলেছেন। একইসঙ্গে জাল দলিল বানিয়ে অন্যকেও জমি দখল করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। বিনিময়ে পাচ্ছেন বড় অংকের টাকা। শুধু তা-ই নয়, নাসির প্রতিনিয়ত নিজের জন্য বা টাকার বিনিময়ে অন্যের জন্য রেকর্ড জালিয়াতি, ভুয়া পর্চা, খতিয়ান ও নামজারিও করে আসছেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ।

নাসিরের দখলবাজির শিকার হয়ে তার বিরুদ্ধে জাল দলিলের মামলাও করেছেন অনেকে। ইতোমধ্যে একাধিক মামলার আসামি তিনি। এ কারণে জেলও খেটেছেন। এরপরও তার অপকর্ম-জালিয়াতি কমছে না, বরং বাড়ছে দিন দিন।

এছাড়া কৌশলে সাধারণ মানুষের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করা তার আরেকটি জালিয়াতির পদ্ধতি। এভাবে তিনি উভয়পক্ষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ধান্দা বাস্তবায়ন করেন। একইসঙ্গে খাস জমি লিজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে নিম্ন আয়ের সহজ-সরল মানুষকে ঠকানোও তার একটি কাজ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ কাজে নাসির একা নন। তার সঙ্গে আছে একটি চক্র। আর এ চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নাসির। তারা পরস্পরের যোগসাজশে জাল দলিল তৈরি করে সেটা দিয়ে আরেকজনকে জমি দখল করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এর বিনিময়ে পান মোটা টাকা। যা আবার ভাগ হয় তাদের চক্রের সদস্যদের মধ্যে।

এছাড়া ভূমি সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমাও তাদের হাত দিয়েই বেশি চলে। এমনকি অভিযোগ আছে, কেউ যদি জায়গা বিক্রি করতে চান, তাহলে তাদের একটা পরিমাণ টাকা আগে দিতে হয়। না হলে রেজিস্ট্রি করার সময় ঝামেলা লাগিয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন।

নবীগঞ্জ উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ লোক বলে নিজেকে পরিচয় দেন নাসির। তার সঙ্গে কর্মকর্তাদের অনেকের যোগাযোগ আছে। আর এ সুবাদেই চলে তার এসব অপকর্ম। এও জানা গেছে, ভূমির সব পর্যায়ের জাল কাগজপত্র আছে তার কাছে। এমনকি জাল স্ট্যাম্প, ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নামে নকল করা সিল ও জাল স্বাক্ষরের ব্যবস্থাও আছে নাসিরের কাছে। একইসঙ্গে পুরোনো দিনের স্ট্যাম্পও আছে জাল দলিল চক্রের এই লোকের হাতে।

গ্রাম্য পঞ্চায়েতের সঙ্গে জড়িত ওই এলাকার মো. আফরোজ মিয়া। তিনি অভিযোগ করে বলেন, নাসির এলাকায় ভূমির দালাল, এমনকি ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। জমি সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করাই তার কাজ। তার নির্দিষ্ট কোনো আয়ের উৎস নেই। জাল-জালিয়াতি করেই তিনি রাজার হালে চলেন।

একই অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মঈন উদ্দিনও। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন নাসির। তার অপকর্মে অতিষ্ঠ মানুষজন।

এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করা হচ্ছে না কেনো, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। জেলও খেটেছেন। এছাড়া এলাকার মানুষ শান্তিপ্রিয়। কেউ বড় কোনো বিপদে না পড়লে দেন-দরবার, মামলায় যেতে চান না। পাশাপাশি এলাকার মুরুব্বিরাও তাকে কিছু বলছেন না। তাই কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলছে না। আশা করছি, প্রশাসন এর একটা ব্যবস্থা নেবে।

এলাকায় সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত আশরাফুল ইসলাম সুমন। নাসির সম্পর্কে তিনি বলেন, নাসির অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, এ খবর আমিও পেয়েছি। তিনি এলাকার নিরক্ষর লোকদের জায়গার দলিলাদি নিয়ে ঘাটাঘাটি করেন। ভূমি কার্যালয়ে প্রতিদিন দৌড়াদৌড়ি তার কাজ।

এ ব্যাপারে কথা বলতে অভিযুক্ত নাসির মিয়ার সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া মমিন বাংলানিউজকে বলেন, মৌখিকভাবে বিষয়টি শুনেছি। আমরা সবসময়ই এর বিরুদ্ধে কঠোর। খোঁজ-খবর নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২০
এসআরএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।