শনিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে স্থানীয় লোকজন নির্মিতব্য ওই হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা হাসপাতাল নির্মাণের কাজ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দেন।
পরে সেখানে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিউল্লাহ শফি।
ওই সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল হবে শুনে হাজারখানেক লোক এসেছিল। আমি এসে তাদের শান্ত করি।
এদিকে স্থানীয়দের বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ। তারা স্থানীয়দের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) সালমান হাসান বাংলানিউজকে জানান, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতাল বানাচ্ছে আকিজ গ্রুপ এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ও স্থানীয়রা প্রতিষ্ঠানটির সামনে বিক্ষোভ করেন।
পড়ুন>>করোনা: তেজগাঁওয়ে হাসপাতাল তৈরিতে বাধা, বিক্ষোভ-ভাঙচুর
‘তাদের দাবি, এ এলাকায় এমন কোনো হাসপাতাল করা যাবে না। এ বিষয়ে আমরা আকিজ গ্রুপের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি, আসলে এখানে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল নয়, কোয়ারেন্টিনের জন্য ভবন হচ্ছে। ’
হাসপাতাল নির্মাণকাজ বন্ধের বিষয়ে আকিজ গ্রুপের পরিচালক শেখ শামীম উদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের পরীক্ষা ও তাদের চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে আমরা এ অস্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। এতে সহযোগিতা করছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
তিনি জানান, জরুরি ভিত্তিতে তেজগাঁওয়ে টিবিএস মোটরসাইকেল বিক্রির যে শোরুমটি ছিল সেটিকে অস্থায়ী হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। এই হাসপাতালে কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কি না তা শনাক্ত করা এবং আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হবে।
দ্রুত হাসপাতাল তৈরির আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আশা করছি দুই সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতালটি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু করতে পারবে। এটি তৈরি হচ্ছে তেঁজগাও-গুলশান লিংক রোডের শান্তা টাওয়ারের পেছনে। আকিজ গ্রুপের পক্ষ থেকে সেখানে বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে।
হাসপাতাল নির্মাণ ছাড়াও এই পরিস্থিতিতে আকিজ গ্রুপের পক্ষ থেকে মাস্ক তৈরিসহ নানাভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো হচ্ছে বলে জানান শেখ শামীম উদ্দিন।
এদিকে ডিএমপির তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। স্থানীয়দের অনেকে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ভুল বুঝে বিক্ষোভ করতে এসেছিলেন। আমরা তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দিয়েছি। এখন সেখানে কোনো সমস্যা নেই।
এদিকে হাসপাতালটি তৈরির অন্যতম উদ্যোক্তা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল নির্মাণে আকিজ গ্রুপ অব কোম্পানিজ আমাদের জমি ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছে। এখানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা যেমন- ভেন্টিলেশন, আইসিসিইউ, কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা থাকবে।
‘৩০০ বেডের এই হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টাই করোনা শনাক্তকরণের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান তিনি।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) বলছে, দেশে এখন পর্যন্ত ৪৮ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মাঝে মৃত্যু হয়েছে ৫জনের। আর এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৫জন।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২০
পিএম/আরকেআর/এসই/এমএ/এজে