নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ঘর থেকে বের হয়ে গত শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিকেলে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হামিদুল হকের দৃষ্টিতে পড়েছিলেন বৃদ্ধ আতাবুর রহমান। পরে রাজশাহী জেলা প্রশাসক ব্যক্তিগতভাবে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করেন এবং বাড়ি থেকে ঝুঁকি নিয়ে বের না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
ডিসি মো. হামিদুল হকের নির্দেশে শনিবার বিকালে বৃদ্ধ আতাবুর রহমানকে খুঁজে বের করেন তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। এরপর তার কার্যালয়ে নিয়ে আতাবুরের হাতে নতুন জামা-কাপড় ও চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী তুলে দেন ইউএনও। তখনই ইউএনও জানান, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর খাস জমিতে বাড়ি হবে আতাবুরের। বিষয়টি নিয়ে ডিসি হামিদুল হক তার সঙ্গে এরই মধ্যে কথা বলে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
রাজশাহীর তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, 'জেলা প্রশাসক স্যার বৃদ্ধের পরিচয় জানার নির্দেশ দেওয়ার পর আমরা তার পরিচয় উদ্ধার করি। তিনি খুব অসহায়। কখনও কাগজ কুড়িয়ে আবার কখনও ভিক্ষা করে তিনি সংসার চালান। বিষয়গুলো জানার পর ডিসি স্যারকে অবহিত করি। স্যারের নির্দেশমতো তাকে নতুন জামা-কাপড় ও চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশকিছু বাজার করে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাকে সরকারি সহায়তায় নগদ অর্থ এবং খাস জায়গায় বাড়ি নির্মাণও করে দেওয়া হবে'।
ষাটোর্ধ বৃদ্ধ আতাবুরের বাড়ি রাজশাহীর তানোর পৌরসভার বড়কুঠি এলাকায়। শুক্রবার বিকালে উপজেলা সদরে কাগজ কুড়াচ্ছিলেন তিনি। এ সময় তার দিকে এগিয়ে যায় পুলিশ। সঙ্গে ছিলেন জেলা প্রশাসক হামিদুল হকও।
ভীতসন্ত্রস্ত আতাবুর ডিসিকে দেখেই বাড়ির বাইরে বের হওয়ার জন্য করজোড় করে ক্ষমা চান। আবেগ আপ্লুত হয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক তখন চাল-ডাল কেনার টাকা দিয়ে ওই বৃদ্ধকে বাড়ি পাঠান। পরে ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করে বিষয়টির বিবরণ দেন ডিসি হামিদুল হক নিজেই। তার ওই পোস্টটি পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভাইরাল হয়ে যায়।
জেলা প্রশাসক হামিদুল হকের ফেসবুক পোস্টটি তুলে ধরা হলো-
জীবিকার প্রয়োজন ও করোনা:
’করোনা পরিস্থিতিতে লোকজনের বাড়িতে অবস্থান পর্যবেক্ষণের জন্য শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে রাজশাহীর তানোর উপজেলা পরিদর্শনে যাই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মেয়র তানোর পৌরসভা, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) তানোর বাজার পরিদর্শন, অকারণে যেসব লোকজন বাজারে ছিলেন তাদের বাজার থেকে সরিয়ে দিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উপজেলার দিকে যাওয়া। এ সময় হঠাৎ ষাটোর্ধ একজন বৃদ্ধ মানুষকে রাস্তার ধারে কিছু পুরনো, ছেঁড়া কাগজ নড়াচড়া করতে দেখে কাছে যাই। আমরা কাছে যেতেই এবং সাথে পুলিশ দেখে তিনি কিছুটা ভয় পেয়ে হাত জোর করে দাড়িয়ে বলেন, 'বাবা আমার যদি কোনও ভুল হয়, মাফ করে দাও, আমি আর বাজারে আসবো না। '
‘আমি সাথে সাথে বৃদ্ধকে বললাম কোনও ভুল না। ভীষণ মায়া লাগলো বৃদ্ধকে দেখে। এ বয়সে তার ঘরে থাকার কথা। নাতিপুতিদের সাথে খেলা করার কথা। কিন্তু হায় দরিদ্র্যতা তুমি তাকে এই চৈত্রের প্রখর রৌদ্রে ক'টি টাকার জন্য, সামান্য চাল কেনার অর্থের জন্য কিছু ছেঁড়া কাগজ কুড়াতে বাধ্য করেছো। তার উপর বিশ্ব কাঁপানো করোনা। কিন্তু এই বৃদ্ধের দরিদ্র্যতাকে করোনা পরাজিত করতে পারেনি। তাকে আটকিয়ে রাখতে পারেনি ঘরের কোণে। ‘
‘বৃদ্ধকে সামান্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে বললাম, আপনি কিছু চাল ডাল কিনে বাড়ি চলে যান। কিছুদিন আর বাজারে আসবেন না। তিনি বললেন, বাবা আর আসবো না। মনটি খারাপ হয়ে গেল। জানি না তার বাড়িটি কেমন, তার বাড়িতে কে কে আছেন? উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিতে বললাম। হায় করোনা, তুমি সকলকে একটু করুণা করো। অন্তত নাম না জানা এই বৃদ্ধের কোনো ক্ষতি করো না। এই মিনতি করি। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে ভালো রাখুন। সারা বিশ্ব হোক করোনা ও করুণা মুক্ত। ভালো থেকো বৃদ্ধ বাবা। আমি তোমার খবর রাখবো নিশ্চয়। '
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২০
এসএস/এমএইচএম