চলমান কারিগরি প্রকল্পের মাধ্যমেই সম্ভাব্য ব্যয় বের করা হয়েছে। অধিকাংশ অর্থই দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে এডিবি।
এর আগে বিশাল কাজ বাস্তবায়নের জন্য ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রকল্প প্রস্তুতিমূলক সুবিধার জন্য কারিগরি সহায়তা’ শীর্ষক প্রকল্প চলমান। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কারিগরি প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পরেই মূল প্রকল্প শুরু হবে। কারিগরি প্রকল্পটি ২১২ কোটি ৬৪ লাখ ৩১ হাজার টাকায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ১৩টি নদীর ওপর রেলওয়ে ব্রিজ নির্মাণের লক্ষ্যে ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ ক্লাসিফিকেশন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বরাবর অনুরোধ করা হয়েছে। নেভিগেশনাল ক্লিয়ারেন্স অনুযায়ী প্রস্তাবিত ব্রিজের উচ্চতা বিদ্যমান ব্রিজের চেয়ে বেশি হয়ে যাবে।
প্রকল্পে নিয়োজিত পরামর্শকের মতে, বিআইডব্লিউটিএ প্রয়োজনীয় নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স রেখে ব্রিজগুলো নির্মাণ করা হলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হবে, যা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে এবং প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারে ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে একটি কর্ডলাইন স্থাপন করতে যাচ্ছে রেলওয়ে। এটি বাস্তবায়িত হলে পর্যটক ও ভ্রমণপিয়াসীরা চট্টগ্রাম স্টেশনে বিরতি ও বিলম্ব এড়িয়ে রাজধানী থেকে সরাসরি পৌঁছে যাবেন কক্সবাজার। এতে যাত্রার সময় প্রায় দেড় ঘণ্টা কমে আসবে।
চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত মিটার গেজ রেলপথ থাকলেও নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে ডুয়েল গেজে রূপান্তর করা হবে। পাশাপাশি ফৌজদারহাট থেকে একটি কার্ভ বা কর্ডলাইন নিয়ে ষোলশহর রেলস্টেশনে যুক্ত করা হবে। ঢাকা থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত একটি কর্ডলাইনও নির্মাণ করা হবে। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে সরাসরি রেলপথ চলে যাবে কক্সবাজার পর্যন্ত।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে আসা ট্রেনগুলোর শেষ গন্তব্য চট্টগ্রাম স্টেশন হওয়ায় সাইডিং লাইনে ট্রেন কক্সবাজারে যেতে সময়ক্ষেপণ হবে। এজন্য নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে ফৌজদারহাট থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার কর্ডলাইন নির্মাণ করে ষোলশহর স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা চলছে। এজন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করছে রেলওয়ে।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আধুনিক রেল যোগাযোগের আওতায় আনতে ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে চুক্তি হয়। এরপর ২০১৭ সালের জুনে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়। এ সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নানা কারণে এই কাজ এক বছর বাড়িয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে মূল ডিপিপি তৈরির মাধ্যমে প্রকল্পের আটটি মূল কাজ শেষ করবে রেলওয়ে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা-সিলেট রেল চলাচলে আখাউড়া জংশন অতিক্রম করতে হতো। প্রায় এক দশক আগে পাঘাচং থেকে আজমপুর পর্যন্ত আট কিলোমিটার কর্ডলাইন নির্মাণের সুবাদে ট্রেনগুলো আগের চেয়ে ১ ঘণ্টা কম সময়ে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করছে। একইভাবে ফৌজদারহাট থেকে কর্ডলাইন হলে ঢাকা থেকে আসা ট্রেনগুলো চট্টগ্রাম স্টেশনে না গিয়ে সরাসরি ষোলশহর স্টেশন হয়ে কক্সবাজারে পৌঁছাবে। কক্সবাজার থেকেও একই পথে ট্রেনগুলো ঢাকা ও অন্য গন্তব্যে যেতে পারবে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেনকে চট্টগ্রাম স্টেশনে যেতে হলে সেখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। চট্টগ্রাম স্টেশনে বিরতির পর লোকোমোটিভ বিচ্ছিন্ন করে ট্রেনের অন্য প্রান্তে সংযুক্ত করতে হবে। এরপর দ্বিগুণ দূরত্ব পেরিয়ে ট্রেনটিকে ষোলশহর স্টেশন পৌঁছতে হবে। ঢাকা-কক্সবাজার রুটের পর্যটকরা ভ্রমণকালে এত দেরির কারণে বিরক্ত হবে। গন্তব্যে পৌঁছতে লাগবে বাড়তি সময়। এজন্য সময় বাঁচাতে ও যাত্রীদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে কর্ডলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৯৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৯৬ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। অর্থাৎ প্রকল্পের আওতায় মোট ১২৭ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার সিংগেল লাইনকে ডুয়েল গেজ ট্রাক নির্মাণ করা হবে, যা পরে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে। এছাড়া রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সুবিধা আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১ , ২০২০
এমআইএস/আরএ/এজে