এ অবস্থায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা বিপাকে পড়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ‘হেয়ার কাটিং সেলুনের’ কর্মী বা নরসুন্দরেরা।
সেলুনগুলোতে নরসুন্দর আর খদ্দেরের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন। ফলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা থাকলেও রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় দুএকটি সেলুন খোলা আছে। তবে কোনো খদ্দের নেই। ফলে অলস সময় পার করছেন নরসুন্দররা।
কথা বলে জানা গেছে, সাধারণ ছুটিতে অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণার পর বেশিরভাগ নরসুন্দর ঢাকার বাইরে নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেছেন। কিন্তু যারা রাজধানীতে বাস করেন তারাও কর্মহীন। ফলে অর্থকষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে আধুনিক নরসুন্দরদের।
বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সেলুনের নরসুন্দরদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগ, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও ও পল্লবী এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, প্রধান সড়কের সেলুনগুলো বন্ধ। এছাড়া এসব এলাকার অলিগলিতে কয়েকটি সেলুনের ঝাঁপ অর্ধেক খোলা দেখা যায়। তবে সাধারণ সময়ের ৫ ভাগ খদ্দেরও আসছেন না।
রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বর সেকশনের সিটি ক্লাব মাঠ সংলগ্ন মারলিন হেয়ার ড্রেসার বন্ধ থাকতে দেখা যায়। সেলুনের ম্যানেজার মো. গোলাপের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গত ২৬ মার্চ থেকে সেলুন বন্ধ। কাজ নেই। একদম অলস সময় পার করছি। আমার কাছে যা টাকা ছিল তা দিয়ে পরিবার নিয়ে কয়েকদিন চলেছি। এখন টাকা শেষ হয়ে গেছে। কী করবো বুঝতে পারছি না। ধার-কর্জ করে চলা ছাড়া আর কোনো পথও দেখছি না।
তিনি বলেন, এ বিপদে যতদিন উদ্ধার না হই, ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই। আমাদের মালিকও কোনো সহযোগিতা করেননি। কাস্টমাররা ফোন করে জানতে চায় কখন সেলুন খুলবে। জানতে চায় কখন কাজ করাতে পারবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কাজ করলে টাকা পাই। কাজ না করলে টাকা পাই না। সেলুন খোলা থাকলে সবমিলিয়ে মাসে ১৮ হাজার টাকা রোজগার হয়। এখন তো কোনো টাকাই পাচ্ছি না। খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি।
রাজধানীর বর্ধিত পল্লবী এলাকার এক সেলুনের মালিক ও কারিগর শাহজালাল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, থানা থেকে এসে বলে গেছে সেলুন বন্ধ রাখতে। প্রথমে কিছুদিন বন্ধ রেখে ঢাকাতেই ছিলাম। কিন্তু এরপরেও যখন দোকান খোলার অনুমতি পাই নাই তখন বাড়ি চলে এসেছি। এদিকে নিয়মিত কাস্টমাররা ফোন দেন। তবে কবে দোকান খুলবো, জানি না।
এদিকে মিরপুর-১ নম্বরে এক ঝাঁপ বন্ধ রেখে সেলুনে কাজ করছেন নরসুন্দর মো. জাবেদ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ১৫ বছর ধরে আমি এ কাজ করি। আজ সকাল থেকে মাত্র দুটো কাজ করেছি।
সেলুন খোলা রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরীব মানুষ কী করে খাব? এছাড়া অন্য কোনো কাজও পারি না। পেটের দায়ে সেলুন খোলা রেখেছি। দোকানে ভিড় দেখলে পুলিশ মানুষের ভিড় কমিয়ে দিয়ে যায়। জীবনে আমি কখনো এমন পরিস্থিতি দেখিনি। গত সাত দিনে তিন দিনও দোকান খুলতে পারি নাই। যে কয়দিন কাজ করেছি ২০০ থেকে দেড়শ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। এ টাকা দিয়ে পরিবার-পরিজনের খরচ চালাচ্ছি। এভাবেই কাটছে আমার দিন। ভবিষ্যতে কী হবে কিছুই জানি না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২০
এমএমআই/এসএইচএস/আরআইএস