ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নুসরাতের জন্য পিবিআইয়ের ভালোবাসা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২০
নুসরাতের জন্য পিবিআইয়ের ভালোবাসা

ফেনী: ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের পর আসামিদের শনাক্ত ও দ্রুতসময়ে গ্রেফতারের বিষয়ে অসামান্য অবদান রেখেছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনার সাফল্য পিবিআইকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল ভিন্ন মাত্রায়।

শুক্রবার (১০ এপ্রিল) আলোচিত সেই হত্যাকাণ্ডটির এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এদিনটিকে স্মরণে রেখেছে সংস্থাটি।

কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে দিনটিকে স্মরণ করেছে তারা।

পুষ্পস্তবক অর্পণের সেই ছবিটি নিজের ফেইসবুক ওয়ালে পোস্ট করেছেন পিবিআই প্রধান বনোজ কুমার মজুমদার। পোস্টে পিবিআইয়ের প্রশংসা করে মন্তব্য করেন প্রায় শতাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারী। এসব মন্তব্যকারীরা ধন্যবাদ জানায় পিবিআইকে। বলেন, পিবিআইয়ের ভূমিকার কারণে সঠিক বিচার পেয়েছে নুসরাতের পরিবারটি।   

‘নুসরাতের জন্য ভালবাসা, পিবিআই’ লেখা সম্বলিত পুষ্পার্ঘটি দেখে পিবিআইয়ের প্রতি আবারো কৃতজ্ঞতা ও ভালােবাসা জানায় নুসরাতের এলাকা সোনাগাজীর মানুষ।

পিবিআইর অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান বলেন, ডিআইজি ও পিবিআই প্রধান বনোজ কুমার মজুমদারে নির্দেশে সকালে ফেনী পিবিআই নুসরাতের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।

নুসরাত হত্যাকাণ্ডে আসামিদের গ্রেফতার ও শনাক্তের বিষয়ে পিবিআইয়ের ভূমিকার বিষয়ে নুসরাতের ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, পিবিআই অনেক গুরুত্বের সঙ্গে এ মামলার বিষয়ে কাজ করেছে। তাদের প্রচেষ্টার কারণে দ্রুততম সময়ে আসামিরা গ্রেফতার হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে খুব দ্রুততম সময়ে বিচারিক আদালতে আমরা সুবিচারও পেয়েছি।

নুসরাতের মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু  ডিআইজি ও পিবিআই প্রধান বনোজ কুমার মজুমদারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এ মামলাটি শেষ হওয়া পর্যন্ত মনিটর করার জন্য। আপনার ও পিবিআইয়ের অবদান কোনোদিন ভােলার মতাে নয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেছিলেন নুসরাতের মা শিরিন আখতার। ওইদিনই অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তার অনুগত কিছু সাবেক ও বর্তমান ছাত্র জনমত গঠন করে সিরাজকে জেল থেকে বের করে আনার জন্য।

তারা ৩ এপ্রিল সিরাজের সঙ্গে কারাগারে পরামর্শ করে এসে ৪ এপ্রিল মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে নুসরাতকে খুন করার পরিকল্পনা নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৬ এপ্রিল নুসরাত মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে খুনিরা পরিকল্পিতভাবে সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে নুসরাতকে হত্যার চেষ্টা চালায়। ঘটনাস্থল থেকে নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর তাকে স্থানান্তর করা হয় ফেনী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় সেখান থেকে নুসরাতকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল মামলা দায়ের করেন। কয়েকদিন নির্মম যন্ত্রণা সয়ে ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টা মারা যায় নুসরাত। ১১ এপ্রিল কবর দেওয়া হয় নুসরাতকে। এরপর মামলাটির ব্যাপারে দায়িত্ব পায় পিবিআই।

এ মামলায় ২৮ মে অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০ জুন অভিযোগ গঠন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। পরে সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত রায়ের জন্য ২৪ অক্টোবর নির্ধারণ করেন। মামলাটিতে মাত্র ৬১ কার্যদিবসে ৮৭ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক গ্রহণ করা হয়।

২৪ অক্টোবর রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২০
এসএইচডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।