করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর থেকে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা কয়েক দফা দ্বীপবাসীকে খাদ্য সহায়তা দিলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান দ্বীপের জনপ্রতিনিধিরা।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুর আহম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, এই দ্বীপের বর্তমানে পরিবারের সংখ্যা ১ হাজার ৪৫৪টি।
এছাড়াও নৌবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকেও কিছু কিছু পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকও ২৯০টি পরিবারে ১ হাজার ৫শ করে নগদ টাকা দিয়েছে। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে কয়েক দফা সহায়তা পেলেও লকডাউন দীর্ঘ হওয়ায় দ্বীপের মানুষ অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছে।
দ্বীপের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হাবিব খান বাংলানিউজকে বলেন, দ্বীপের বেশিরভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা চলে পর্যটন ব্যবসা ঘিরে। কিন্তু বর্তমানে অফসিজন এবং করোনা পরিস্থিতি এক হয়ে পর্যটন ব্যবসা একদম বন্ধ। যে কারণে দ্বীপের অর্ধেকেরও বেশি বাসিন্দা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তারা খাবার-দাবার নিয়ে খুব কষ্টে আছে।
‘কিছু কিছু মানুষ সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছে। তারা মোটামুটি ভালো আছে। হতদরিদ্র ৮শর বেশি পরিবার পড়েছে সংকটে।
তবে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশের মানুষ কষ্টে আছে কিন্তু বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হিসেবে সেন্টমার্টিনের মানুষ অনেক ভালো আছে। এখানে দফায় দফায় খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
দ্বীপের বেশিরভাগ পরিবার অতি দরিদ্র। নৌবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন দফতর থেকে তাদের কয়েক দফা খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হলেও কাজকর্ম করতে না পারায় এসব পরিবারের সদস্যরা কষ্টে রয়েছেন। ১ হাজার ৪৫৪ পরিবারের মধ্যে এ ধরনের পরিবারের সংখ্যা হবে অর্ধেকেরও বেশি। তবে খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখা হলে মানুষ এ সংকট মোকাবিলা করতে পারবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ১শ ৬টি হোটেল-মোটেল ও কটেজ রয়েছে। আর রেস্তোরাঁ রয়েছে ৫০টি। দ্বীপের প্রায় নয় হাজার বাসিন্দার বেশিরভাগই জড়িত পর্যটন ব্যবসায়।
যা বলছেন দ্বীপের অসহায় মানুষ
সেন্টমার্টিন দ্বীপের মাঝের পাড়ার বাসিন্দা ইমাম হোসেন ট্যুরিস্ট গাইডের কাজ করতেন। উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আট ছেলে মেয়ে নিয়ে কষ্টে পড়েছেন তিনি।
ইমাম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর থেকে দশ টাকা কেজিতে ৩০ কেজি চাল ছাড়া আর কোনো সহায়তা পাননি। তার আশপাশের অনেকে নগদ টাকাসহ একাধিকবার সহায়তা পেলেও তার ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। যে কারণে অভাব দেখা দিয়েছে তার সংসারে।
শুধু তার পরিবার নয়, পাশের নাজির আহম্মদেরও একই অবস্থা- এমন দাবি ইমামের।
তিনি আরও বলেন, দ্বীপে অনেকেই সহায়তা দিচ্ছে কিন্তু যারা পাচ্ছে তারা পেতেই আছে। কিছু পরিবারকে একেবারে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
এজন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. নাজিরকে দায়ী করে তিনি বলেন, গতকাল আমার স্ত্রীসহ আমরা মেম্বারের বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি বলেছি। মেম্বারের সঙ্গে আমাদের ঝগড়াও হয়েছে।
একইভাবে দুর্দশার কথা জানালেন পূর্বপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, অফসিজনে রোজগার কম হলেও আমরা মোটামুটি চলতে পারি। কিন্তু এবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা খুব কষ্টে পড়ে গেছি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য আমরা বিতরণ করেছি। এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ আছে। যেহেতু সেন্টমার্টিন বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ সেখানকার মানুষ যেন খাদ্যসামগ্রী পায় সে ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২০
এসবি/এএ