চিঠিতে দিনাজপুর নার্সিং কলেজের ল্যাব সহকারী শাহ জহুরুল হোসেনকে লালমনিরহাট নার্সিং কলেজে প্রেষণে দিয়ে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্সে সংযুক্ত করা হয়। আদেশের (১০ মে) তিন দিনের মধ্যে সংযুক্ত কর্ম এলাকায় যোগদানের জন্য বলা হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মানুষের নাগরিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গড়ে তোলে। পরবর্তী সময়ে নবম জাতীয় সংসদকালীন হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবলসহ সেবার মানের উন্নতি ঘটেনি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। প্রায় সবসময় চিকিৎসক সংকটে থাকে হাসপাতালটি।
প্রতিবছর নতুন নিয়োগের সময় চিকিৎসক দেওয়া হলেও, বদলি আর প্রেষণে চলে যাওয়ায় চিকিৎসক সংকট থেকেই যায় হাসপাতালটির। বর্তমানে চলার মতো চিকিৎসক থাকলেও নেই ল্যাব টেকনোলজিস্ট। হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় ল্যাবটি তালাবদ্ধ রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ডা. মেশকাতুল আবেদ। পরে তিনি হাসপাতালের এ চিত্র দেখে টেকনোলজিস্ট চেয়ে একাধিকবার আবেদন করেন। কিন্তু সরকারিভাবে না পাওয়ায় স্থানীয়দের সহায়তায় উম্মে মমেনীন চৌধুরী শিমুল নামে স্থানীয় একজন টেকনোলজিস্টকে বিনা বেতনে চুক্তিভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ল্যাব চালু করেন। কয়েক মাস পরে ডা. মেশকাতুল আবেদ বদলি নিয়ে চলে যাওয়ায় আবারো ভোগান্তিতে পড়ে কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সংকট বেড়ে যায়।
করোনা শনাক্তে নমুনা সংগ্রহ করার কাজটি করেন ল্যাব টেকনোলজিস্ট। আর এ উপজেলায় সেই গুরুত্বপূর্ণ পদটিই শূন্য। স্থানীয়ভাবে নিয়োগ পাওয়া উম্মে মমেনীন শিমুলকে দিয়ে কয়েকদিন নমুনা সংগ্রহ করা হলেও সম্প্রতি উপজেলায় নয় জন শনাক্ত হওয়াতে ঝুঁকিভাতা ও চূড়ান্ত নিয়োগ ছাড়া বেসরকারি সেই টেকনোলজিস্ট কাজে যেতে অনীহা প্রকাশ করছেন বলে দাবি করেছেন করোনা মনিটরিং টিমের সদস্য উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক মাহবুব আলম।
ল্যাব সহকারীর অভাবে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহে জঠিলতা দেখা দেয়। এতেই শেষ নয়। নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে পৃথক একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন হলেও এ উপজেলায় তা নেই। ফলে সদর হাসপাতালের করোনা অ্যাম্বুলেন্সটি এ উপজেলায় অতিরিক্ত সেবাদান করছে। এক্ষেত্রে সদর উপজেলার চাহিদা পূরণ করার পরে এ উপজেলায় সেবা দেয় অ্যাম্বুলেন্সটি। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা। ফলে করোনা যুদ্ধে সাহসের পরবর্তীতে এ উপজেলাবাসীর মধ্যে বাড়ছিল আতঙ্ক।
এ নিয়ে গত ২মে বাংলানিউজে 'আদিতমারীতে টেকনোলজিস্টের অভাবে করোনা-নমুনা সংগ্রহে জঠিলতা' শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যার ফলে করোনা প্রাদুর্ভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দ্রুত সময়ে ল্যাব সহকারী পদায়ন করে রোববার(১০ মে) এক আদেশ জারি করেন রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আমিন আহমেদ খাঁন। চিঠিতে দিনাজপুর নার্সিং কলেজের ল্যাব সহকারী শাহ জহুরুল হোসেনকে লালমনিরহাট নার্সিং কলেজে প্রেষণে পদায়ন করে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংযুক্ত করা হয়। আদেশের তিন দিনের মধ্যে সংযুক্ত কর্ম এলাকায় যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বাংলানিউজ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর আরেফিন প্রধান বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় ল্যাব সহকারী খুবই প্রয়োজনীয় একটি পদ। এটা শুন্য থাকায় স্বেচ্ছাসেবী দিয়ে কাজ করা খুবই কষ্টের। সংবাদ প্রকাশ করে পদায়নের মাধ্যমে উপজেলার স্বাস্থ্যসেবার মান এগিয়ে নেয়ায় বাংলানিউজ পরিবারের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২০
এসআইএস