রাজধানীর গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে মিরপুর, ধানমন্ডি, শান্তিনগর, কমলাপুর, পুরান ঢাকাসহ প্রায় সব এলাকার নগরবাসীই অতিষ্ঠ মশার উৎপাতে। করোনার এই সময়ে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হলেও জানালা খুললেই বাসা-বাড়িতে মশা ঢোকে ঝাঁকে ঝাঁকে।
রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা আবুল সালেহ আহমেদ মশার যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, লকডাউনের সময়ে সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। কিন্তু সেই ঘরেও শান্তি নেই; মশা। সামান্য সময় জানালা খোলা রাখলেই একটু পর পুরো ঘর মশায় ভরে যায়। সন্ধ্যার পর এই সমস্যা আরও বেশি হয়। বিষয় এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, বাইরে গেলে করোনা আর বাসায় থাকলে মশা।
সাধারণত বর্ষা মৌসমে মশার প্রকোপ বাড়লেও এবার বর্ষার আগেই মশার এমন প্রকোপে বেশ অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী।
যদিও এবার বেশ আগে থেকেই মশক নিধনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছে রাজধানীর মশক নিধনে প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই প্রতিষ্ঠান ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, মশক নিধনের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। করোনার সময়েও মশক নিধনে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং মশক নিধন কর্মীরা। ঈদের পর বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে বলেও ডিএসসিসির একটি সূত্র জানায়।
অন্যদিকে, জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে ডেঙ্গু সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিজেদের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচির কথা জানায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন বাংলানিউজকে বলেন, বছরের শুরু থেকেই আমরা সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। এটা অব্যাহত আছে। নিয়মিত লার্ভিসাইডিং, ফগিং করা হচ্ছে। এর বাইরে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। সেখানে সবাইকে বলা হয়েছে, সবাই যেন স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে পানি জমতে না দেন। আমরা কিন্তু প্রতিটি জায়গায় নোটিশ দিয়েছি, মাইকিং করেছি। আমরা চাই সবাই যেন নিজ নিজ আঙিনা বা প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার রাখে। জমাট বাধা পানিমুক্ত অবস্থায় রাখে।
এরপরেও যারা আইন মানবেন না, সরকারি নির্দেশনা মানবেন না এবং সচেতন হবেন না, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, যারা এসব বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হবেন না, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এরজনই পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রোববার (১০ মে) থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু হয়েছে। পাশাপাশি আমরা আমাদের অন্যান্য রুটিন কাজও অব্যাহত রেখেছি। আমরা আমাদের সার্ভেতেও দেখেছি যেমন, নির্মাণাধীন ভবন বা স্থাপনা থেকেও ডেঙ্গু মশার প্রজনন বেশি হচ্ছে। শত কোটি টাকা ব্যয়ে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। অথচ সামান্য সচেতনতা এবং সদিচ্ছার অভাবে সেখানে ডেঙ্গু জন্ম নিচ্ছে। অনেকের মাঝেই সেই সদিচ্ছাটা নেই। কিছু কিছু জায়গায় তাই আইনের প্রয়োগ করতে হয়। নইলে অনেকেই স্বপ্রণোদিত হয়ে তার দায়িত্বটা পালন করেন না।
এছাড়াও করোনার কারণে এই সময়ে মশক নিধন কার্যক্রম বেশ চ্যালেঞ্জিং বলে দাবি করেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। বলেন, আমাদের যেসব মশক কর্মী কাজ করছেন, তারা কিন্তু করোনা ঝুঁকির বাইরে না। তারাও ঝুঁকিতে আছেন আর এটা আমাদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। আমরা আমাদের পূর্ব সতর্কতা অনুযায়ী, সব কর্মীকে মাস্ক, গ্লাভস এবং নিরাপত্তামূলক পোশাক দিয়েছি। অনেকেই গরমের কারণে পোশাক পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। তবে মাস্ক এবং গ্লাভস পরাটা আমরা বাধ্যতামূলকভাবে নিশ্চিত করেছি। আল্লাহর রহমতে আমাদের এখনও কেউ আক্রান্ত হননি। কিন্তু একবার আক্রান্ত হলে পুরো কার্যক্রমে একটি বড় ধরনের চাপ পড়বে। মশক কর্মীদের মাঝে কেউ আক্রান্ত হলে তার সঙ্গে যারা কাজ করেন, তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশনে পাঠাতে হবে। আমাদের কর্মীদের মনোবলের ওপর একটি আঘাত পড়বে। একটি ওয়ার্ডেও এমন হলে তখন কী হবে? তখন তো তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি বা ছুটি দিতে হবে।
বর্তমানে ডিএনসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০ থেকে ১২টি হ্যান্ড স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে প্রতিদিন সকাল বেলা লার্ভিসাইডিং করা হচ্ছে। প্রতিটি মেশিনে প্রতদিন ছয় বার করে ওষুধ স্প্রে করা হয়। আর প্রতি বিকেলে প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০টি ফগিং মেশিনের মাধ্যমে একবার করে এডাল্টিসাইডিং করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২০
এসএইচএস/টিএ