করোনার প্রকোপের কারণে এই প্রথমবারের মতো ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষে সরগরম হয়ে উঠবে না নৌ-পথ। যাত্রীদের পদচারণায় উপচে পড়া ভিড় দেখা যাবে না লঞ্চঘাট আর নৌ-যানগুলোতে।
মঙ্গলবার (১২ মে) ১৮ রমজান অতিবাহিত হলেও অন্য বছর ঘরে ফেরার যে টিকিট সোনার হরিণ, এবার সেই টিকিটের সন্ধানে কোনো ভিড় নেই। কাউন্টারগুলো তালাবদ্ধ। অথচ অন্যান্য বছর ১৫ রমজানের পর থেকেই টিকিট বুকিং কাউন্টারগুলোতে ঘরে ফিরতে আগ্রহী মানুষজনের উপচে পড়া ভিড়ে টেকা দায় হয়ে যেতো।
মঙ্গলবার বরিশাল নদী বন্দরের ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, অভ্যন্তরীণ রুটের ছোট লঞ্চগুলোও ইঞ্জিন বন্ধ করে নিঃস্তব্ধ হয়ে পড়ে আছে। ঘাটে কোয়ারেন্টিন সেন্টারের জন্য প্রস্তুত ঢাকা-বরিশাল রুটের একটি মাত্র লঞ্চ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাকি লঞ্চগুলো যার যার ডকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সে সব লঞ্চের কর্মীদের অনেকেই বাড়ি চলে গেছেন, কেউ লকডাউনের কারণে লঞ্চেই সময় পার করছেন।
গত ২৪ মার্চ থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলোর টিকিট বুকিং কাউন্টার তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে বলে জানান বিভিন্ন লঞ্চের স্টাফ ও কাউন্টর ম্যানেজাররা।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্রমান্বয়ে চালু করার সুবিধার্থে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও পেশার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নৌ-যানে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে ১৪টি কারিগরী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও নৌ-যান চলাচলের বিষয়ে বা যাত্রী পরিবহনে দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয়নি বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। বরিশালের লঞ্চ মালিকদের পক্ষ থেকেও এসব ব্যাপার এখন পর্যন্ত তেমন কোনো আগ্রহ দেখানো হয়নি।
এসব ব্যাপারে লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, সুন্দরবন নেভিগেশনের চেয়ারম্যান, বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান রিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েই লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর লঞ্চ চালনার ক্ষেত্রে যে ১৪ পরামর্শ দিয়েছে, তা এককভাবে লঞ্চ মালিকদের পক্ষে মেনা চলা সম্ভব নয়। লঞ্চ মালিকদের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিআইডব্লিউটিএ ও সর্বোপরি সরকারকে এসব ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সদিচ্ছা রয়েছে, তবে সহযোগীতাও প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমরা এখনও স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনার বিষয়গুলো নিয়ে কোনো আলোচনায় বসিনি। কেউ আমাদের ডাকেওনি। আর যেহেতু এ মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ বাড়ানো হয়েছে, তাই সে পর্যন্ত লঞ্চ চালনার ইচ্ছা মালিকদের নেই। এ জন্য স্বাভাবিক ও স্পেশাল সব ট্রিপ আপাতত বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে আমাদের সব কার্যক্রম।
লঞ্চ না চললেও স্টাফদের বেতন দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে সাইদুর রহমান বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের মতো কিন্তু আমাদের বড় বড় লঞ্চ কোম্পানির শ্রমিকরা আন্দোলনে করছেন না, ২ মাস ধরে আমরা তাদের বেতন দিয়ে যাচ্ছি। এ মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলে আরও ১ মাস লঞ্চ না চালিয়েই বেতন দিতে হবে স্টাফদের।
এদিকে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পেলে নির্দেশনা অনুযায়ী লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিআইডিব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক ও বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৩ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২০
এমএস/এইচজে