ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আব্বা নিজেও আড়ম্বরপূর্ণ প্রস্থান চাননি: আনন্দ জামান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৬ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২০
আব্বা নিজেও আড়ম্বরপূর্ণ প্রস্থান চাননি: আনন্দ জামান

ঢাকা: জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আড়ম্বরপূর্ণ প্রস্থান চাননি বলে জানিয়েছেন তার ছেলে আনন্দ জামান। এমনকি অস্থায়ী কবরেও তাকে দাফনের অনুরোধ করেছিলেন।

রোববার (১৭ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্মৃতিচারণে তিনি এ কথা জানান।
 
আনন্দ জামান বলেন, অনেকেই আমাদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছেন- আড়ম্বরপূর্ণ বিদায় দিতে না পেরে।

সত্যি কথা বলতে, আব্বা আমাদের নানাভাবে গত চার বছরে বুঝিয়েছিলেন তিনি এত আড়ম্বরপূর্ণ প্রস্থান চান না। এমনকি অস্থায়ী কবরে তাকে দাফনের অনুরোধ করেছিলেন। আবেগের কারণে আমরা সেই অনুরোধ রাখতে পারিনি, তবে প্রকৃতির খেয়ালে তার বিদায় হলো খুব অনাড়ম্বরভাবেই।
 
সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এত মানুষের ভালোবাসা-সাহায্য-সহযোগিতা-সহমর্মিতা পেয়ে আমরা অভিভূত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবার পোস্ট, কমেন্ট, গদ্য-কবিতা-আঁকা দেখে আমরা মুগ্ধ। জাতীয় দৈনিকে আব্বাকে নিয়ে লেখাগুলো পড়ে আমরা আপ্লুত। কিছু শিরোনাম আমাদের কাঁদিয়েছে, কিছু সম্পাদকীয় আমাদের সামনে আব্বাকে নতুন করে চিনিয়েছে। আমরা কৃতার্থ।

‘সাংবাদিকদের কথা আগেই বলেছি। কবরস্থানে ক্যামেরা মাটিতে নামিয়ে, হাতে মাটি নিয়ে যখন তারা কবরে দিয়েছেন তখন তাদের আর সাংবাদিক বলে মনে হয়নি; মনে হয়েছে অতি আপনজন। টিভি চ্যানেলের টকশো, ফেসবুকের লাইভ প্রোগ্রাম প্রচার করায় আমরা কৃতজ্ঞ। ’
 
দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে অনেকে আমাদের ফোন করেছেন। কারো সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে, কারো সঙ্গে হয়নি। যাদের ফোন ধরতে পারিনি, তাদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ’
 
দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ জামান আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেক পরিচিত ও অপরিচিত মানুষ আব্বার চিকিৎসার সাহায্যে যেভাবে এগিয়ে এসেছিলেন, তাতে আমরা চিরকৃতজ্ঞ। সব ধর্মের মানুষ একযোগে যেভাবে দোয়া-প্রার্থনা করেছেন, তা আমাদের জন্য অনেক পাওয়া।
 
আনিসুজ্জামানের শেষযাত্রার সব প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও তিনি করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তার সবই বাতিল করতে হয়।
 
এ বিষয়ে আনন্দ জামান বলেন, আব্বার মৃত্যুর পরে করোনার কারণে উদ্ভূত জটিল পরিস্থিতিতে, সুষ্ঠুভাবে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে ঋণী। একটা পর্যায়ে গার্ড অব অনার দেওয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে আমরা আশাহত হই। প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরীর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় অবশেষে গার্ড অব অনার দেওয়া সম্ভব হয়। তার প্রতি আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।

‘যে মানুষটা এদেশের ভাষার সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন, দেশটা স্বাধীন করায় ভূমিকা রেখেছিলেন- সেই মানুষটা পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্মানের সঙ্গে বিদায় না পেলে একটা কষ্ট থেকে যেত। যে হাত দিয়ে দেশের সংবিধানের অক্ষরগুলো লেখা হয়েছিল সেই হাত জাতীয় পতাকার স্পর্শ না পেলে সারাজীবন একটা দুঃখ থেকে যেত আমাদের। আমরা ভাগ্যবান সেই দুর্ভাগ্য আমাদের স্পর্শ করেনি। ’
 
সবশেষে তিনি বলেন, আব্বাকে শেষ বিদায় দিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে যখন ফিরে আসছি, তখন মনে হলো তাকে সঙ্গে নিয়েই যেন বাড়ি যাচ্ছি।
 
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বিকেল চারটা ৫৫ মিনিটে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএসএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান৷ বার্ধক্যজনিত কারণে তার মৃত্যু হলেও রাতে জানা যায়, তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন৷
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৬ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২০
ডিএন/এএ/ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।