এ বিষয়ে চলতি বছরের ১৮ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে তদন্ত করে ১ (এক) মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ দুর্নীতি দমন কমিশনের চিঠি দেওয়ার দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পর গত ৭ মে ২০২০ তারিখে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে।
মোংলা বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের একটি পদোন্নতি বোর্ড বন্দরের ৫৬ জনকে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি দেয়। এর মধ্যে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ইনল্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার থেকে সহকারী প্রকৌশলী (নৌ) পদে আবুল কালাম আজাদ, সোহেল রানা ও মুজিবুর রহমানকে পদোন্নতি দেয়। নিয়ম বহির্ভূতভাবে পদোন্নতি দেওয়ায় বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। পরবর্তীকালে সহকারী প্রকৌশলী পদে সোহেল রানার পদোন্নতি যাচাইয়ের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ কমিটি গঠন করে।
কমিটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা অনুযায়ী ইনল্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার থেকে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির কোনো সুযোগ নেই। পরে সোহেল রানা তার পদোন্নতির বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন। আবেদনের সঙ্গে তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের সুপারিশ দাখিল করেন। যেটি পরবর্তীকালে জাল প্রমাণিত হয়। ওই ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় সোহেল রানাকে চাকরিচ্যুত করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
দীর্ঘদিন চাকরিচ্যুত থাকার পরে সোহেল রানা তার শাস্তি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বন্দরের বোর্ড সভায় সোহেল রানার অপসারণের শাস্তি কমিয়ে আগের পদে (ইনল্যান্ড ড্রাইভার) বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এর মধ্যে মন্ত্রীর স্বাক্ষর জালিয়াতি এবং সোহেল রানাকে চাকরিতে পুনর্বহালের অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা আর অভিযুক্তদের বক্তব্য যাচাই-বাছাই করেন।
২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুস সাত্তার শেখ ও অতিরিক্ত সচিব জিকরুর রেজা খানম সই করা তদন্ত রিপোর্টে জানানো হয়- ইনল্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার থেকে আবুল কালাম আজাদ, সোহেল রানা ও মজিবুর রহমানকে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়া বিধি পরিপন্থি ও অবৈধ। তাই ওই তিনজনের পদোন্নতি বাতিল এবং তাদের গৃহীত অতিরিক্ত বেতন ভাতা তাদের কাছ থেকে ফেরত নেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে।
‘পরে একই বছরের ১১ মে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে উপসচিব আ. সাত্তার শেখ। ওই চিঠিতে পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে আগামী ত্রিশ দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তিন বছরেও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। ’
এদিকে ওইসব পদোন্নতিতে অর্থ-বাণিজ্য এবং সোহেল রানার মন্ত্রীর স্বাক্ষর জালিয়াতি, শিক্ষাগত সনদ জাল করারও অভিযোগ তদন্ত করতে ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ১৮ মার্চ মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর আলাদা দু’টি চিঠি পাঠায় দুর্নীতি দমন কমিশন। তবে এক্ষেত্রেও দুদকের চিঠি অনুযায়ী তদন্ত করেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। বরং দুর্নীতি দমন কমিশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইনল্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদকে দুদকের চিঠির চারদিনের মধ্যে সহকারী প্রকৌশলী (নৌ ভান্ডার) থেকে নির্বাহী প্রকৌশলীর (নৌ) চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়।
স্বাক্ষর জালিয়াতি ও নিয়ম বহির্ভূত পদোন্নতির বিষয়ে সোহেল রানাকে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোনটি কেটে দেন। পরে আর ফোন রিসিভ করেননি।
চলতি দায়িত্ব ও দুদকের অভিযোগের বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাকে যোগ্য মনে করেছেন তাই দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি কোনো অনিয়ম করিনি।
বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক প্রশাসন মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আমরা কয়েকদিন আগে এ বিষয়ে দুদকের চিঠি পেয়েছি। পদোন্নতিতে অনিয়মের বিষয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি অভিযোগকারীকে ডাকবেন এবং সব নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে রিপোর্ট দেবেন। এরপরে আরও বিস্তারিত বলা যাবে।
আবুল কালাম আজাদকে নির্বাহী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দুদকের চিঠি হাতে পাওয়ার আগে তাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আবুল কালাম আজাদকে নির্বাহী প্রকৌশলী (নৌ) হিসেবে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাত্র। এটা কোনো পদোন্নতি নয়। পদটি খালি ছিল, তাই তাকে ওই পদের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কোনো পদ শূন্য থাকলে কর্তৃপক্ষ চলতি দায়িত্ব দিতে পারেন বলে দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৩ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২০
আরএ/এএ