ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মধুপুরে রঙিন ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৪ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২০
মধুপুরে রঙিন ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব .

মধুপুর (টাঙ্গাইল): “আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি, তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগণ জুড়ি।”

নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃত বেগম সুফিয়া কামালের এই কবিতায় সেকাল এবং একালের শিশুদের তফাতের কথা উঠে এসেছে । কবিতায় বলা ওই তফাৎ যেন হারিয়ে গেছে।

 

সেকালের শিশুদের আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর খেলায়, একালের শিশুরাও মেতে উঠেছে। শিশুদের সঙ্গে বিভিন্ন বয়সীরাও সামিল হয়েছেন এ খেলায়। করোনাকালের একঘেয়েমি বন্দি সময় কাটাতে আর অন্য রকম ঈদ পালনে খেলাটি উপভোগ্য করে তুলতে তাই আয়োজন  করা হয়েছিল ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব।

সোমবার (২৫ মে) ঈদুল ফিতরের দিন বিকেলে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মধুপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড পুণ্ডুরা গ্রামে রঙিন ঘুড়ি ওড়ানোর জমজমাট প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল।

মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পুণ্ডুরা গ্রামের অধিবাসী বজলুর রশীদ খানের একক চেষ্টায় জাঁকজমক আয়োজনে মধুপুরের বিভিন্ন এলাকার অর্ধ শতাধিক নানা বয়সী মানুষ ঘুড়ি নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

গোপালপুর স্মৃতি ভিএম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ, মধুপুর আদর্শ ফাজিল মাদরাসার প্রভাষক শামসুল আলম, ভাইঘাট আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজের সহকারি অধ্যাপক আসলাম হোসেন, সাবেক কাউন্সিলর ফজলুল হক, সাবেক সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হেকমত আলী, মধুপুর প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম প্রতিযোগিতায়
বিচারের দায়িত্বে ছিলেন।  

ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতায় মধুপুরের শামীম, শাকিল ও মোটেরবাজারের লোকমান যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ এ আয়োজনকে আগামীতে অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তারা উল্লেখ করেন, অনুমান করা হয় প্রায় ২ হাজার৮০০ বছর পূর্বে চীন দেশে সর্বপ্রথম ঘুড়ির উৎপত্তি। পরবর্তীকালে এটি এশিযার অন্যান্য দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, জাপান এবং কোরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।  

এছাড়াও, ইউরোপে ঘুড়ি খেলাটির প্রচলন ঘটে প্রায় ষোলশ বছর পূর্বে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পুরনো ঢাকায পৌষ মাসের শেষ দিন, অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব পালিত হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিশ্বকর্মা পূজার দিন ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথা রয়েছে বলে জানানো হয়।

তারা বলেন, সুফিয়া কামালের কবিতার মতো আজকের শহুরে শিশুরা কলের জাহাজ চালায় না ঠিকই তবে আগের মতো ঘুড়িও খুব একটা উড়ায় যে তাও না। এক সময় এদেশের ছেলেপুলেরা প্রচুর ঘুড়ি উড়াতো । শরৎ, হেমন্তে বিকেলের আকাশ ছেয়ে যেত ঘুড়িতে। আকাশ জুড়ে উড়ে বেড়াত নানা রঙের ঘুড়ি। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, বেগুনী এ রকম কত রঙের ঘুড়িতে আকাশ ছেয়ে যেত!

দেখে মনে হতো, নানান রঙের মেলা বসেছে আকাশ জুড়ে। কোনো ঘুড়ি কাটা গেলে মনে হতো রঙের মেলা থেকে যেন একটি রঙ খসে পড়ল। খসে পড়া রঙটি ভেসে ভেসে দূর থেকে বহু দূরে চলে যেত। তারই খণ্ডচিত্র আজ দেখা গেল। গ্রাম কি শহর কোথাও এখন ঘুড়ি ওড়ানো খেলা খুব একটা দেখা যায় না। শিশুরা এখন খাঁচায় বন্দী ।

ঘরে বসে শহুরে শিশুরা শুধু কম্পিউটারে কিংবা ভিডিও গেইম খেলে। যারা মাঠে যায় তারা ফুটবল বা ক্রিকেট খেলে। গ্রামীণ শিশুদের মধ্যেও ক্রিকেট খেলায় ঝোঁক বেশি । ঘুড়ি ওড়ানো খেলা একেবারে হারিয় গেছে বলা যাবে না। ঘুড়ি উড়ানো খেলা কম হলেও এখনো টিকে আছে। মধুপুরে ঈদের দিনে এমন আয়োজন সে কথাই জানান দিচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪২৪ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২০
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।