ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১৫ বছর ধরে জলাবদ্ধতায় ৩ গ্রামের এক হাজার পরিবার 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৫ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২০
১৫ বছর ধরে জলাবদ্ধতায় ৩ গ্রামের এক হাজার পরিবার 

গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের তিনটি গ্রামের অন্তত এক হাজার পরিবার দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন। সামান্য বৃষ্টিতে উঠানে পানি জমে যায়। এমন কি চুলার মধ্যে পানি উঠে রান্না খাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। 

এদিকে দীর্ঘ জলাবদ্ধতার কারণে তিন ফসলি জমিতে এখন ফসল ফলানোই দূরূহ হয়ে পড়েছে। তাই ওই তিন গ্রামের মানুষ এ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর ইউনিয়নের গোহালা ইউনিয়নের গয়লাকান্দি, গঙ্গারামপুর ও খালিয়া গ্রামের পানি মাদারীপুর বিলরুট চ্যানেলে নামতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে গয়লাকান্দি খালের উৎস মুখে একটি স্লুইচ গেট নির্মাণের দাবি করেছেন ওই তিন গ্রামের মানুষ।

তারা আরো জানান, ওই তিন গ্রামে এক হাজার পরিবার বসবাস করে। ব্রিটিশ আমলে মাদারীপুর বিলরুট চ্যানেল খননের সময় গোপালগঞ্জ থেকে টেকেরহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। তখন গয়লাকান্দি খালের উৎসমুখ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে ওই তিন গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হতে থাকে। এসব গ্রামের জমিতে  এক সময় তিন ফসল হতো। এখন কোনো ফসল হয় না। পানি অপসারণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। রাস্তাঘাট ও বাড়ির উঠানে পানি জমে থাকে, চুলায় পানি উঠে যায়। এতে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে ওই তিন গ্রামের এক হাজার পরিবার।  

গয়লাকান্দি খালের উৎস মুখে একটি স্লুইচ গেট নির্মাণ করলে এই জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাবে এলাকার জনগণ। জমিতে আবার ফলবে ফসল, কৃষকের মুখে আবার ফুটবে হাসি।  

ওই এলাকার কৃষক মো. আবুল হোসেন (৫৫), মো. হারেজ মাতুব্বর (৬৫), এনজেল শেখ  (৬২), মো. বশির শেখ (৭০), আব্দুর রউফ শেখসহ (৫৫) কথা হয় অন্তত অর্ধশতাধিক কৃষকের সঙ্গে।  

তারা বলেন, এই এলাকার জমিতে এক সময়ে তিন ফসল হতো। এখানকার পানি সরকারি খালের মধ্যদিয়ে নদীতে গিয়ে পড়তো। মাদারীপুর বিলরুট চ্যানেল খননের সময় গোপালগঞ্জ থেকে টেকেরহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। যা বর্তমানে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়ক। তখন গয়লাকান্দি খালের উৎসমুখ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে তিন গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হতে থাকি। আগে এতটা জলাবদ্ধতা ছিল না, পানি চলে যেত বিল এলাকায়। কিন্তু বর্তমানে এলাকায় বাড়িঘর রাস্তাঘাট, ইটভাটা হওয়ার ফলে কোনোদিকেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। যে কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই বাড়ির উঠানে, চুলায় পানি জমে। গয়লাকান্দি খালের উৎস মুখে একটি স্লুইচ গেট নির্মাণ করলে এই জলাবদ্ধতার হাত থেকে আমরা রক্ষা পাবো। আমাদের এখানকার অনাবাদী জমিতে আবার ফলবে ফসল, ভালো থাকবো আমরা।

স্থানীয় গোহালা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম মাতুব্বর বলেছেন, আমার এই ওয়ার্ডের মানুষ দীর্ঘ বছর জলাবদ্ধতার সমস্যায় ভুগছি। গয়লাকান্দি খালের উৎস মুখে একটি স্লুইচ গেট নির্মাণ করার জন্য আমরা বার বার পানি উন্নয়ন বোর্ডে লিখিত আবেদন করেছি, কোনো কাজ হয়নি। এখানকার কৃষক ও বাসিন্দাদের দীর্ঘ বছরের সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি গয়লাকান্দি খালের উৎস মুখে একটি স্লুইচ গেট নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জ জেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, মুকসুদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে দিয়ে ওই এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ওই এলাকায় জলাদ্ধতার কারণে গয়লাকান্দি, গঙ্গারামপুর, খালিয়ার প্রায় দুশ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডর একটি খাল রয়েছে, কিন্তু পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর বিলরুট চ্যানেলের বেড়িবাঁধে একটি স্লুইচ গেট না থাকায় নদীতে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না এবং পানি প্রবেশও করতে পারছে না। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি, স্লুইচ গেট নির্মাণের জন্য লিখিতভাবে অনুরোধ জানাবো। আশা করছি পানি উন্নয়ন বোর্ড অচিরেই স্লুইচ গেট নির্মাণ করবে।
 
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেছেন, ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে একটি প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ প্রকল্পের মধ্যে এমবিআর চ্যানেলের বেড়িবাঁধের গয়লাকান্দিতে স্লুইচ গেট নির্মাণের বিষয়টি রয়েছে। আশা করছি আমরা ওই এলাকায় স্লুইচ গেট নির্মাণ করে বিষয়টি সমাধান করতে পারবো।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।