অন্যদিকে স্ব স্ব দোকান খুলতে পুরোপুরি প্রস্তুত দোকানিরা। তাদের মতে, রমজান মাসে মার্কেট ও দোকান খোলা রেখে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ট্রেনিং সম্পন্ন করেছি।
তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই সব কিছু খুলে দিলে বিপদ বাড়তে পারে। আরও অন্তত দুই সপ্তাহ লকডাউন রাখা উচিত বলেও মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ মালিক সমিতি বলছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন মতে, ৩০ মে’র পর সাধারণ ছুটি বাড়ছে না। তবে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও জীবন-জীবিকা বাঁচানোর তাগিদে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি কঠোর ভাবে মানতে হবে। দোকানিরা রমজান মাসে মার্কেট ও দোকানগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলার প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। যদিও ওই সময়ে অনেক দোকান মালিক, কর্মচারী ও ক্রেতা মাস্ক ব্যবহার করেনি। এ কারণে এবার থেকে যথযথ স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে জরিমানার বিধান রাখার কথা বলা হয়েছে।
মৌচাক মার্কেটেরর লেডিস পোশাক বিক্রেতা রুনা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বছরব্যাপী এক প্রকার বসে থাকতে হয়। বেচাকেনা হয় দুই ঈদে, এবার ঈদ মিস করেছি। আশা করি সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, আবারও ভালো ব্যবসা করতে পারবো।
আনারকলি মার্কেটের জুয়েলারি কারিগর সুমন বলেন, সব থেকে লোকসানি ছিলো জুয়েলারি ব্যবসা। এবার বৈশাখের বাজার ধরতে পারিনি, ঈদের বাজারও পায়নি। রোববার (৩১ মে) মার্কেট খুলবে, আবার দুপয়সা আয় হবে।
করোনা ভাইরাসকালে অনেক ব্যবসায়ী হয়ে পড়েছেন ঋণগ্রস্ত। খিলগাঁও বাজারের জুতা ব্যবসায়ী জুয়েল বলেন, ঋণ করে দোকানে মাল উঠানো হয়েছিল এর পর পরই করোনার থাবা। দোকান ভাড়া, বাসা ভাড়া, সংসারের খরচ চালাতে আবারও ঋণ করতে হয়েছে। এখন ব্যবসা ভালো চললে ঋণ থেকে মুক্তি মিলবে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব মো. জহিরুল হক ভূইয়া জানান, 'ইতোমধ্যেই রমজান মাসে মার্কেট ও দোকান খোলা রেখে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ট্রেনিং সম্পন্ন করেছি। যদিও তা সত্ত্বেও শতভাগ দোকান মালিক, কর্মচারি ও ক্রেতাসাধারণকে মাস্ক পরানো সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, শুধুমাত্র মাস্ক ব্যবহার করলে করোনা সংক্রমণ ৮০ শতাংশ প্রতিরোধ করা সম্ভব। '
তিনি বলেন, 'এ অবস্থায় সব বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহরের দোকান মালিক সমিতি ও মার্কেট কমিটিকে অনুরোধ করা যাচ্ছে, শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে, বিশেষ করে মাস্ক না পরা ও যথাযথ শারীরিক দূরত্ব মানা না হলে ৫শ’ টাকা করে জরিমানা এবং কেউ হাঁচি, কাশি, জ্বর নিয়ে লোকালয়ে গেলে ১ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা যেতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আগে জীবন পরে জীবিকা। ’
তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই সব কিছু খুলে না দিয়ে আরও অন্তত দুই সপ্তাহ পর সব কিছু খুলে দেয়া যেতে পারে। না হলে বিপদ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, 'সবকিছু খুলে দিলে প্রচুর মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে, অনেকের মৃত্যু ঘটবে। এই অসুস্থতার কারণে মানুষের মধ্যে ভালো থাকার যে অনুভূতি সেটা নষ্ট হয়ে যাবে। এসব মানুষের চিকিৎসার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আমাদের জাতীয় অর্থনীতির ওপরেও চাপ ফেলবে। এর ফলে যে উদ্দেশ্যে অর্থনীতির চাকা সচল করার জন্য লকডাউন তুলে নেওয়া হচ্ছে, তার বিপরীত ফল হবে। লকডাউন পরিস্থিতি আরও অন্তত দুই সপ্তাহ বাড়িয়ে দিলে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হতো, এখন তার চেয়ে দ্বিগুণ বা চারগুণ ক্ষতি জাতীয় অর্থনীতি এবং দেশের মানুষকে মোকাবিলা করতে হতে পারে। '
বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, ৩০ মে, ২০২০
ইএআর/এমএমএস