ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

লঞ্চে যাত্রীরাই নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এখনো সচেতন নন

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৮ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২০
লঞ্চে যাত্রীরাই নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এখনো সচেতন নন লঞ্চের ডেকে যাত্রীদের ভিড়। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: বরিশাল থেকে রাজধানীমুখী লঞ্চগুলোতে প্রতিদিনই যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আর সেই কারণে গত তিনদিনে কোনো লঞ্চেই তৃতীয় শ্রেণীর (ডেক) যাত্রীদের নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা যায়নি।

যদিও যাত্রীরা বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পরিবহন করায় স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে লঞ্চ যাত্রায়, তাই স্বাভাবিক সময়ের মতো লঞ্চ চালনা করলে স্বাস্থ্যবিধি বজায় থাকবে বলে মনে করেন তারা।

লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বলছেন, এত মানুষের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা তাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়।

আর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বলছে, জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছেন। তবে যাত্রীরাই নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এখনো সচেতন নন, এমনকি তারা নানান অযুহাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম, বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার করছেন না। আর এসব যাত্রীদের জিজ্ঞাসা করলে তারাও দাঁড় করাচ্ছেন নানান অযুহাত।

মাস্ক না পরা নিয়ে যাত্রীদের নানা অজুহাতের মধ্যে কেউ বলছেন মাস্ক খোয়া গেছে, আবার কেউ বলছেন কেনার সময় পাননি বা কিনে নেবেন, কেউ বলছেন আনতে মনে নেই। আবার কেউবা হারিয়ে গেছে কিংবা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার দোহাইও দিচ্ছেন। যদিও গাদাগাদি করে ডেকে বসার বিষয়ে যাত্রীরা দুষছেন লঞ্চ কর্তৃপক্ষের বিধি-নিষেধ না থাকার বিষয়টিকে। সেসঙ্গে লঞ্চের সংখ্যা কমানোকে।

এদিকে প্রতিদিনই জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ'র কর্মকর্তারা র‌্যাব ও পুলিশকে নিয়ে নদীবন্দর এলাকায় বিকেল থেকেই মনিটরিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় তারা হ্যান্ডমাইক দিয়ে যাত্রী সাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন। সময়ে সময়ে স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বাধাও দিচ্ছেন ঘাটে প্রবেশ করতে কিংবা লঞ্চে উঠতে।

নদীবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসারে নদীবন্দরের বাইরে বিআইডব্লিউটিএ'র খোলা জায়গায় লঞ্চগুলোর তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য টিকিট কাটার ব্যবস্থা করা হয়। টিকিট নিয়ে বন্দরের পন্টুনে প্রবেশ করার নিয়ম থাকলেও কড়াকড়ি না থাকায় বিভিন্ন ফাঁকফোকর দিয়ে অসংখ্য যাত্রী প্রবেশ করে নদীবন্দরে থাকা ঢাকাগামী লঞ্চগুলোতে। লঞ্চের ডেকে যাত্রীদের ভিড়।  ছবি: বাংলানিউজযদিও লঞ্চের তুলনায় যাত্রীদের উপস্থিতি প্রতিদিনই বিকেল নাগাদ বিপুল পরিমাণে বেড়ে যায়, ফলে সন্ধ্যা হতেই লঞ্চগুলোর ভেতরে তৃতীয় শ্রেণীতে (ডেকে) ছিলে উপচেপড়া ভিড় হয়ে যায়। জোরদার প্রতিবন্ধকতা ব্যবস্থা না থাকায় সবগুলো লঞ্চেই সংখ্যা অনুযায়ী ধারণক্ষমতার অনেক বেশি যাত্রী লক্ষ্য করা গেছে। যাত্রীরা সবাই মুখে মুখে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বললেও, আগ্রহ নিয়ে তা মানেননি বেশিরভাগেই। এই অবস্থায় করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরার আশঙ্কাও রয়েছে যাত্রীদের।

ঘাট শ্রমিকরা বলছেন, যাত্রীরা চোর-পুলিশের খেলা খেলছে, যখন ম্যাজিস্ট্রেট ও র‌্যাব-পুলিশের সদস্যরা যেখান থেকে যায় তখন স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারী যাত্রীরা সেখান থেকে সটকে পড়েন। তারা গেলে আবার সেখানে জড়ো হন। আর মাস্ক না পরাদের মধ্যে পুরুষ যাত্রীর সংখ্যাই বেশি, যারা নিজেরা তো মানেন না সঙ্গে শিশু-বৃদ্ধকেও ঝুঁকিতে ফেলছেন।

সার্বিক বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক ও বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, সরকারি নির্দেশনা কার্যকর করার লক্ষ্যে তারা সবাই সচেষ্ট রয়েছেন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন। তবে দীর্ঘদিন পরে লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় কমেনি। আর যাত্রীরাই এখনো সচেতন নন। মাস্ক না পরে আসার কারণ জানতে চাইলে নানান অযুহাত দেখাচ্ছেন। আবার নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতেও যাত্রীরা সহায়তা করছেন না, নিষেধ করার পরও তারা ঢাকাগামী লঞ্চে কৌশলে গিয়ে চেপে বসছেন। সবার আগে তাই যাত্রীদের সচেতন হওয়াটা খুবই প্রয়োজন।

এদিকে বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান স্বাস্থ্যবিধি সবাইকে মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। লঞ্চের ডেকে যাত্রীদের ভিড়।  ছবি: বাংলানিউজতিনি এক বার্তায় বলেন, নিজেদের জীবন-জীবিকার জন্যই হয়তো লঞ্চ বা বাসে চলাচল করতে হচ্ছে। তবে সবাইকে মনে রাখতে হবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আমি চলাচল করতে পারছি কিনা। যদি স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হয়, তাহলে কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত না করে আমি নিজে সতর্ক থাকার চেষ্টা করবো। এজন্য সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ থাকবে যে লঞ্চে ভ্রমণের আগে টিকিট পেয়েছেন কিনা সেটা নিশ্চিত হউন, আর এ মুহূর্তে ভিড় রয়েছে কিনা। সেক্ষেত্রে ভ্রমণ তারিখ, লঞ্চ, বাস পরিবর্তন করুন কিন্তু কোনোভাবেই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করবেন না, ভিড়ের মধ্যে যাবেন না।

উল্লেখ্য রাত সাড়ে ৮টার পরে বরিশাল নদীবন্দর থেকে লঞ্চগুলো ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার কথা থাকলেও, যাত্রীচাপ সামাল দিতে না পেরে গত তিনদিনের প্রতিদিনই প্রায় ১ ঘণ্টা আগে ঘাট ত্যাগ করোনা হচ্ছে ঢাকাগামী লঞ্চগুলোকে।

যদিও যাত্রীদের অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ সময়ে রাতের বেলা বরিশাল থেকে সরাসরি ঢাকার উদ্দেশ্যে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬টি লঞ্চ চলাচল করতো এবং ঢাকা থেকে সরাসরি বরিশালেও সমান সংখ্যক লঞ্চ প্রতিরাতে চলাচল করতো। এখন তা কমিয়ে তিনটিতে এনেছে মালিকপক্ষ। এতে করে যাত্রী তুলনায় লঞ্চে কমে গেছে এবং ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৩ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২০
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।