গ্রীষ্মকালের তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে প্রতি বছর জেলা সদরের সঙ্গে (নানিয়ারচর, বরকল, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি ও লংগদু) ৬টি উপজেলার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু করোনার কারণে মানুষ দুই মাস ঘরবন্দি থাকায় যোগাযোগের সমস্যাটি এ বছর তেমন ভোগ করতে হয়নি।
সরকারের পক্ষ থেকে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করতে অঘোষিত লকডাউন তুলে দেওয়ায় সারাদেশের মত গত ৩১ মে থেকে রাঙামাটিতে যানবাহন চলাচল শুরু করে। তবে লঞ্চ চলাচল রাঙামাটিতে এখনো স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে এবং সচেতনতায় লংগদু, জুরাছড়ি এবং বরকল উপজেলা প্রশাসন জেলা সদরের সঙ্গে লঞ্চে যোগাযোগ আপাতত বন্ধ রেখেছে। আগামী ১৫ জুন থেকে জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ স্বাভাবিক করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে কাপ্তাই হ্রদের উপশাখা কাচালং নদীতে পানি না থাকায় জেলা সদরের সঙ্গে দেশের বৃহৎ উপজেলা বাঘাইছড়ির যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে এখনো।
বাঘাইছড়ি উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা মো. সালাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, কাচালং নদীতে পানি নেই। তাই জেলা সদরের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটেছে। কিছুদিন বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে গেলে কাচালং নদীতে পানি বাড়বে এবং যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাকিস্তান আমলে কাপ্তাই হ্রদটি তৈরি করা হয়েছিলো রাঙামাটির মানুষকে বিদ্যুৎসেবা দিতে। এজন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করা হয়েছিলো তৎকালীন সময়ে।
এরপর দীর্ঘ বছর পার হলেও কাপ্তাই হ্রদটিকে রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবেশ সুরক্ষা এবং দখল-দারিত্ব থেকে রক্ষা করতে সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট মহলের দায়িত্বহীনতায় কাপ্তাই হ্রদের পাড়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পরিকল্পনাবিহীন কয়েক লাখ বসতি। স্থাপন করা হয়েছে অস্বাস্থ্যকর টয়লেট, ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জন। মাটি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করায় হ্রদের পরিধি দিনদিন ছোটো হয়ে আসছে।
যে কারণে প্রতিবছর গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরু থেকে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যায় এবং যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে। যোগাযোগ বিছিন্ন হওয়ার কারণে কয়েক লাখ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে। ব্যবসায়ীরা পড়ে চরম বিপাকে, চাষিরা চাষ বঞ্চিত হয়।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি উচ্চপদস্থ থেকে কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিং বিষয় নিয়ে বারবার আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে ২০১৯ সালে নৌ ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিলো এমন তথ্য জানিয়েছিলেন বর্তমান রাঙামাটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) একেএম মামুনুর রশীদ।
বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা মঈন উদ্দিন সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা লঞ্চ মালিকরা বার বার বাংলাদেশ নৌ অভ্যন্তরীণ অধিদপ্তরকে কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিং করার ব্যাপারে চিঠি লিখেছি। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকেও একাধিকবার বলেছি।
তিনি আরও বলেন, তবে এ বছর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হ্রদে ড্রেজিং করার পরিকল্পনা ছিলো। করোনায় এ পরিককল্পনা বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী বছর এ কার্যক্রমের সফলতা মুখ দেখবো বলে যোগ করেন লঞ্চ মালিক সমিতির এই নেতা।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) একেএম মামুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিং করার ব্যাপারে গত বছর মন্ত্রণালয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিলো। এই বছর থেকে কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিলো। এখন কাজের পরিকল্পনা কতটুকু বা কি পর্যায়ে আছে সে বিষয়ে জানাতে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে তারপর বলতে পারবো।
মামুনুর রশিদ আরও বলেন, কাপ্তাই হ্রদ সম্পর্কে সবার সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এই হ্রদ এই এলাকার মানুষের সম্পদ। তাই এই সম্পদকে টিকিয়ে রাখা আমাদের, আপনাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। আমরা সবাই একটু সচেতন হলে হ্রদের দূষণ ও হ্রদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২০
আরএ