ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ পৌষ ১৪৩১, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দগ্ধ রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন লিপি ওসমান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৭ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২০
দগ্ধ রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন লিপি ওসমান লিপি ওসমান ও দগ্ধ নাহিদ।

নারায়ণগঞ্জ: ‌‘আমি কি পচে গলে মারা যাব। কেউ কি নেই আমাকে একটু বাঁচাবেন। শরীর থেকে গোসত খসে পড়ছে। পচে যাচ্ছি আমি। করোনায় পকেটে টাকা নেই। চিকিৎসা করব কোথা থেকে। মরার আগে যদি একটু চিকিৎসা পেয়ে মরতে পারতাম। তাহলে মৃত্যুটা হয়ত একটু শান্তির হতে পারত।’

আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় নজরুল ইসলাম নাহিদ নামে এক অসহায়ের পরিবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এভাবেই একটু আকুতি জানিয়েছিলের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর সেই অসহায় মানুষের আকুতি নারায়ণগঞ্জের মানবতার সংগঠন ‘এহসান পরিবার’ তাদের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ছবিসহ পোস্ট করেন।

পোড়া রোগীর সেই বাঁচার আকুতি নজরে আসে নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান পত্নী জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপির।

শুক্রবার (৫ জুন) বিকেলে লিপি ওসমান তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করেন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে। ওই দিন রাতেই চিকিৎসা ও ভর্তির ব্যবস্থা করেন এমপিপত্নী লিপি ওসমান পোড়া রোগী নাহিদের।

এ বিষয়ে এহসান পরিবারের সমন্বয়ক সাংবাদিক রোমান চৌধুরী জানান, ফতুল্লার চাঁদমারী মাউড়াপট্টি এলাকায় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম নাহিদ এক সময় ভিডিও এডিটিংয়ের কাজ করতেন। গত বছরের ডিসেম্বরে স্ত্রী, কন্যাসহ ঘরের চুলার লিকেজ থেকে অগ্নিদগ্ধ হন তিনি। স্ত্রী ও কন্যা সুস্থ হয়ে উঠছেন। কিন্তু মার্চ মাসে করোনার কারণে টাকার অভাবে কোনো হাসাপাতালে আর যেতে পারেননি পোড়া রোগী নাহিদ। পরবর্তীতে ঘরে পড়ে থাকতে থাকতে অগ্নিদগ্ধ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পচন ধরে নাহিদের। একপর্যায়ে তার শরীরের মাংস খসে পড়তে থাকে। একদিকে টাকার অভাব আরেকদিকে করোনা পরিস্থিতিতে কোথায় কিভাবে চিকিৎসা নেবে তার কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিল না পরিবারটি। এর মধ্যেই ওই রোগীর পরিবার বাঁচার আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। পরবর্তীতে আমার খোঁজখবর নিয়ে বাড়িতে গিয়ে রোগীর অবস্থা আশংকাজনক দেখতে পেয়ে সহযোগিতার জন্য আমাদের ‘এহসান পরিবারের’ হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ছবিসহ পোস্ট দেই। এতে খবর পেয়ে রোগীকে শহরের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে ভর্তির জন্য ব্যবস্থা করেন এমপি শামীম ওসমান পত্নী লিপি ওসমান। বর্তমানে রোগীকে ভর্তির জন্য অবজারভেশন ইউনিটে রাখা হয়েছে।

 এ বিষয়ে রোগীর ভাই জাহিদ ইসলাম জানান, আমার ভাবতে পারিনি এভাবে আল্লাহ আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। লিপি ওসমানের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। আমরা শুধু তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারব। এটাই আমাদের সামর্থ্যে আছে। আমার ভাই এখন হাসপাতালে অবজারভেশনে আছে।

এ বিষয়ে লিপি ওসমান মোবাইল ফোনে জানান, একজন মানুষ পচে গলে মরবে এটা হাতে পারে না। মানুষ মানুষের জন্য। ওর জন্য আমি যা করতে পেরেছি তা কিছুই না। একজন মানুষ আরেকজনের বিপদে পাশে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। ওর চিকিৎসা আরো আগে থেকেই দরকার ছিল। দোয়া করি যেন মানুষটা সুস্থ হয়ে পরিবারের কাছে ফিরতে পারে।

তিনি সমাজের বিত্তবানদের প্রতি প্রতি আহ্বান করে জানান, এই করোনায় মানুষ নানা সমস্যার সম্মুখীন। আমার আহ্বান বা অনুরোধ থাকবে সামাজের বিত্তবান মানুষগুলোর প্রতি। যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা দিয়ে আমরা বিপদগ্রস্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই। দেখবেন মানুষ খুশি হয়ে দোয়া করবে। আর আাল্লাহর মাখলুক খুশিতো আল্লাহ আমাদের ওপর খুশি থাকবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০২০৭ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।