নদীতে মাছ ধরেই চলে তাদের জীবন-জীবিকা। আর এভাবেই প্রজম্মের পর প্রজম্ম কাটিয়ে আসছেন মানতা নারী-পুরুষরা।
উপকূলীয় এলাকা ঘুরে মানতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নাগরিক সুযোগ সুবিধাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে ভোলার উপকূলীয় এলাকার নৌকাভাসি মানতা সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন-জীবিকা। বর্তমানে চরম সংকটে দিন কাটাছে তাদের। এরমধ্যে আবার ইলিশের অকাল আর করোনা ভাইরাসের কারণেও তাদের স্বাভাবিক জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। যারফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন তারা।
অনেকেই আবার নৌকার জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরে আসার চেষ্টা করলেও পেশাগত কারণে ফিরে আসতে পারছেনা। তবে মানতাদের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতলী, শিবপুর ইউনিয়নের ভোলারখাল, স্লুইজঘাট ও রাজাপুর ইউনিয়নের জোরখালসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মানতাদের সঙ্গে কথা কথা বলে জানা যায়, তাদের সংকট আর অনিশ্চয়তার কথা। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত এসব মানুষের কষ্টে দিন কাটালেও সরকারি সহায়তা তাদের কাছে পৌঁছায় না।
মানতা নারী ইয়ানুর বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি, মাছ পেলে খাবার জুটে না পেলে কষ্টে দিন কাটে। পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে আমরা অনিশ্চয়তা রয়েছি।
ঝর্না বেগম বলেন, তাদের পরিবারে স্বামী-স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ি, এক ছেলে ও দুই মেয়েসহ আটজন নৌকাতে থাকেন। প্রতিদিন খাবার জোগাড় করতে অনেক টাকা লাগে। কিন্তু মাছ নেই, তাই রোজগারও কমে গেছে, আমরা কোনো ত্রাণ পাইনি।
সবিনা ইয়াসমিন বলেন, আমাদের অনেকেই ভোটার হয়েছেন কিন্তু অন্য মানুষ যে সুবিধা পায় আমরা তা পাইনা, সামান্য কিছু দেয়া হলেও তা দিয়ে আমাদের কি চলে? একই কথা জানান বিউটি বেগমও।
স্লুইচঘাট এলাকার মানতা নৌকা বহরের লালু সর্দার বাংলানিউজকে বলেন, নদীতে যদি মাছ থাকে তাহলে আমাদের চলতে ফিরতে খাওয়া দাওয়া করতে একটু ভালো হয়, মাছ না থাকলে কেউ খেয়ে, কেউবা না খেয়ে থাকে। কেউবা ধার-দেনা আর এনজিও ঋণ নিয়ে চলে। আমরা সারা বছরই নৌকায় থাকি। এখন যদি সরকার আমাদের জন্য একটা ব্যবস্থা করে তাহলে আমাদের বহরের ৬০টি নৌকার সবাই ভালোভাবে দিন কাটাতে পারতো।
নৌকাভাসি মানতাদের সরকারি সহায়তা পৌঁছানো হয়েছে উল্লেখ করে তাদের জীবন উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান ভোলা সদর সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, নৌকাভাসি এসব জেলেদের জন্য আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জিআর বরাদ্দ এনে তাদের ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও করোনা ভাইরাসের সহায়তা এবং মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যেও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যদিকে ২৪তম বিসিএস ফোরামের মাধ্যমে তাদের এই দুর্যোগকালীন সময়ে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। এতে তারা কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, যারা ত্রাণ পাচ্ছে না তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় বসবাস করছে না। তাই তাদের স্থায়ী পুনর্বাসন সহায়তা দেওয়া যাচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে তাদের জন্য কি পরিকল্পনা করা যায়, সেই বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২০
এনটি