আর ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের বাগে আনতে এরইমধ্যে কয়েকজন কাউন্সিলরের কাছে পাঠিয়েছিলেন আর্থিক উপঢৌকন। কিন্তু এতে লাভ হয়নি।
গত ৩১ মে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩০ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ২১ দিনের ছুটিতে গেছেন রাসিক প্রধান প্রকৌশলী।
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক ২১ দিনের ছুটি নিয়েছেন। এখন তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন খন্দকার খায়রুল বাসার। তিনি রাসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। গত ৪ জুন এই ছুটি কার্যকর করেন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
এর আগে একনেকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। প্রকল্পটির মেয়াদকাল ধরা হয়েছে তিন বছর। সিটি করপোরেশনও শিগগিরই এসব প্রকল্পের কাজ শুরু করতে চায়। কিন্তু জটিলতা পেকেছে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ নিয়ে।
এরইমধ্যে ওই প্রকল্পের পরিচালক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক। কিন্তু তার চাকরির মেয়াদ আছে মাত্র সাত মাস। আগামী বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি তার চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। আর নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদকালের চেয়ে তার চাকরির মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস বেশি থাকতে হবে। যা তার নেই।
রাসিকের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম জানান, ৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) হতে তাদের নানাভাবে প্রলোভন দিচ্ছেন প্রধান প্রকৌশলী। ঈদের আগে কয়েকজন কাউন্সিলরকে টাকাও দিয়েছেন, যাতে তার বিষয়ে মেয়রকে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া হয়। তাকেও টাকা দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি টাকা ফেরত দিয়েছেন।
রাসিকের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মোমিন জানান, তার কাছেও পিয়নের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তিনিও সেই টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে, ছুটিতে যাওয়ার পর থেকে জাতির জনকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ বিগত সময়ে তার একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের তথ্য সামনে বেরিয়ে আসছে।
২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। মেয়র বুলবুল দায়িত্ব গ্রহণের পরই দ্রুত পাল্টে যায় নগর ভবনের চিত্র। অভিযোগ উঠেছে ওই সময় মেয়রকে খুশি করতে নগর ভবনের দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো জাতির জনকের ছবি সম্বলিত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন খোদ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক।
এ ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশিত হলেও এতোদিন বিষয়টিকে মিথ্যা ও অপপ্রচার বলেই দাবি করে আসছিলেন তিনি। তবে হালে পিডি হতে কাউন্সিলরদের কাছে আর্থিক উপঢৌকন পাঠানোর ঘটনার পর আবারও ওই বিষয়টি সবার সামনে এসেছে।
সিটি করপোরেশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকতা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর পোস্টার ছেঁড়া ও কটূক্তি করা ছাড়াও তিনি নানান দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। গভীর অনুসন্ধান করলে তার সকল দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে জানান তারা।
তবে চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা বা প্রকল্প পরিচালক হতে কাউন্সিলরদের নিজের পক্ষে নিতে টাকা পাঠানোর কথা অস্বীকার করেছেন প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক। তিনি বলেন, একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে এমন অপপ্রচার শুরু করেছেন’।
অপরদিকে রাজশাহীর মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন জানিয়েছেন, একনেকের পরিপত্র অনুযায়ী প্রকল্প পরিচালক হওয়ার যে যোগ্যতা থাকার কথা, তা নেই আশরাফুল হকের। আইন ও নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করতেই পারেন। তবে নিয়মের বাইরে কিছু করা যাবে না। এছাড়া কাউন্সিলরদের অভিযোগ পাওয়া গেছে, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪০ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২০
এসএস/ ইউবি